Untitled 1 43

50 / 100 SEO Score

বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার ক্রয়, ডলার বাজার স্থিতিশীলতা, পাঁচ মাসে ২৫১ কোটি ডলার—ডলার বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য ধরে রাখতে চলতি অর্থবছরে আগের তুলনায় আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকায় আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাঁচ মাসেই ২ হাজার ৫১৪ মিলিয়ন বা ২৫১ কোটি ৪০ লাখ ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গতকাল মঙ্গলবার ১৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিলামের মাধ্যমে ২০২ মিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিন প্রতি ডলারের ক্রয়মূল্য ছিল ১২২ দশমিক ২৭ থেকে ১২২ দশমিক ২৯ টাকার মধ্যে, যেখানে কাট–অফ রেট ধরা হয় ১২২ দশমিক ২৯ টাকা। এর ফলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ পর্যন্ত মোট ডলার ক্রয়ের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫১৪ মিলিয়ন ডলারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষ্য, ডলারের কৃত্রিম মূল্য ওঠানামা ঠেকানো ও বাজারকে স্থিতিশীল রাখাই এ নীতির মূল লক্ষ্য। তাদের দাবি, যেসব ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ডলার জমা হচ্ছে, কেবল তাদের কাছ থেকেই নিলামের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে ডলার কেনা হচ্ছে, যাতে বাজারে কোনো ধরনের নেতিবাচক অস্থিরতা তৈরি না হয়।

তবে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা ভিন্ন চিত্র দেখছেন। তাদের মতে, রমজান সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার প্রবণতা বাড়ছে, আবার সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি নীতির কিছু শিথিলতার কারণে ডলারের চাহিদাও বেড়েছে। এ সময় বাজার থেকে নিয়মিত ডলার কিনে নেওয়ায় সরবরাহ সংকুচিত হচ্ছে, ফলে ডলারের মূল্য আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে আমদানি ব্যয় ও মূল্যস্ফীতিতে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করছে।

চট্টগ্রামভিত্তিক এক শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রমজানের আগে ডলারের চাহিদা বাড়া স্বাভাবিক। কিন্তু একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যখন বাজার থেকে ডলার শোষণ করছে, তখন ব্যাংকগুলো বছরের শেষ দিকে অতিরিক্ত মুনাফা নেওয়ার সুযোগ পেয়ে দাম আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে আমদানির খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে এবং ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।

আইএমএফের ঋণচুক্তির অংশ হিসেবে গত মে মাস থেকে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যবস্থায় এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে ডলারের মূল্য নির্ধারণ করে। তবু উচ্চ চাহিদার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারাবাহিক ক্রয় বাজার সংকোচন ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন খান বলেন, “আমরা বাজারে কৃত্রিম হস্তক্ষেপ করছি না। অতিরিক্ত ডলারধারী ব্যাংকের কাছ থেকেই নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনছি। রপ্তানি আয় এবং প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। তারই একটি অংশ কিনে নিয়ে আমরা রিজার্ভ শক্তিশালী রাখার পাশাপাশি বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখছি।”

বিশ্লেষকদের মতে, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রয়–নীতি যদি উচ্চ চাহিদার সময় যথাযথভাবে সমন্বিত না হয়, তবে ডলারের দাম বাড়তে পারে। এতে আমদানির খরচ ও সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে। ব্যবসায়ীদের আর্থিক ঝুঁকি কমাতে বৈদেশিক মুদ্রানীতিতে আরো স্বচ্ছ ও পূর্বনির্ধারিত রোডম্যাপ প্রয়োজন বলে মত দেন তারা।

রপ্তানিকারক ও প্রবাসী আয়কারীদের স্বার্থ রক্ষায় উপযুক্ত বিনিময় হার ধরে রাখতে গত জুলাই থেকে নিয়মিত ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বিভিন্ন পণ্যের আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে দুই হাজার ৯৪১ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি।

তবে একই সময়ে এলসি নিষ্পত্তি কিছুটা কমেছে। প্রথম পাঁচ মাসে এলসি নিষ্পত্তির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭১৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলারে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭৪ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ কম। বিশ্লেষকদের মতে, এলসি খোলা বাড়লেও নিষ্পত্তি কমা এবং একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার ক্রয়—এই তিনের সমন্বিত প্রভাবে বাজারে এক ধরনের চাপ তৈরি হচ্ছে, যা সামনের মাসগুলোতে আরও স্পষ্ট হতে পারে।

সামগ্রিক চিত্র বিবেচনায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রপ্তানি ও প্রবাস আয়ের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে আমদানিকারকদের জন্যও যেন ডলারের প্রাপ্যতা স্বাভাবিক থাকে, সেই ভারসাম্যই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য আর্থিক খাতে নীতিনির্ধারকদের আরও সতর্ক, সমন্বিত ও তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্তই পারে ডলারের বাজার ও সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )