যে ভিটামিনের অভাবে স্নায়ুর সমস্যা দেখা দিতে পারে

যে ভিটামিনের অভাবে স্নায়ুর সমস্যা দেখা দিতে পারে

52 / 100 SEO Score

বয়স পঞ্চাশ পেরোলেই ভিটামিন বি১২-এর অভাব, স্নায়ুর সমস্যা লক্ষণ, ভিটামিন বি১২ ঘাটতির লক্ষণ অনেক পুরুষের শরীরে ধীরে ধীরে দেখা দিতে থাকে। দিনের শেষে হাত-পা অবশ হয়ে আসা, রাতে ব্যথায় ঘুম ভেঙে যাওয়া—অনেকেই এটাকে ‘বয়সের স্বাভাবিক লক্ষণ’ ভেবে এড়িয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকরা মনে করেন, এগুলো শরীরের ভেতরে তৈরি হওয়া ঘাটতির গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কেত, বিশেষ করে ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতির ইঙ্গিত।

৫০-এর পর পুরুষদের মধ্যে ভিটামিন বি১২-এর অভাব খুবই সাধারণ একটি সমস্যা, অথচ বেশির ভাগ সময়ই তারা বিষয়টি বুঝতে পারেন না। স্নায়ুর দুর্বলতা, হাঁটার সময় ভারসাম্য হারানো, রাতে পা নাড়ানোর প্রবণতা, ঘুমে ব্যাঘাত—এসবের পেছনে শুধুই বয়স নয়, থাকতে পারে এই একটি ভিটামিনের ঘাটতি। সময়মতো গুরুত্ব না দিলে ছোট অস্বস্তিই একসময় বড় জটিলতায় রূপ নিতে পারে।

কেন ৫০-ঊর্ধ্ব পুরুষদের জন্য ভিটামিন বি১২ এত গুরুত্বপূর্ণ?

ভিটামিন বি১২ শুধু স্নায়ুর সমস্যা লক্ষণ কমানোর জন্যই নয়; মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখা, স্মৃতিশক্তি রক্ষা, চিন্তাশক্তি সক্রিয় রাখা এবং অ্যালঝাইমার্স রোগের ঝুঁকি কমানোর সঙ্গেও সরাসরি যুক্ত। একই সঙ্গে শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে ভিটামিন বি১২ অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।

এই ভিটামিনের ঘাটতি সাধারণত ধীরে ধীরে শুরু হয়। শুরুতে বোঝা না গেলেও ধীরে ধীরে উপসর্গগুলো স্পষ্ট হতে থাকে—

ভিটামিন বি১২ ঘাটতির কিছু সাধারণ স্নায়বিক লক্ষণ

১. হাতে-পায়ে ঝিঁঝি ধরা
হাত বা পায়ের তালু, পেশি বা স্নায়ুতে বারবার ঝিঁঝি ধরা বা সূচ ফোটার মতো অনুভূতি হলে তা ভিটামিন বি১২-এর অভাবের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে।

২. পেশির দুর্বলতা
ভিটামিন বি১২ কমে গেলে পায়ে টান ধরা, ভারী লাগা, হাঁটা বা সিঁড়ি ভাঙতে অস্বস্তি তৈরি হতে পারে। অনেকেই দেখেন, আগে যে কাজগুলো সহজে করতে পারতেন, এখন করতে গিয়ে ক্লান্তি বা দুর্বলতা বেশি অনুভব করছেন।

৩. হাঁটায় ভারসাম্য হারানো
স্নায়ু দুর্বল হয়ে গেলে মস্তিষ্ক থেকে শরীরে সঠিক সঙ্কেত পৌঁছায় না। ফলে হাঁটার সময় টলমল ভাব, ভারসাম্য হারানো বা হঠাৎ হোঁচট খাওয়া বাড়তে পারে—বিশেষ করে ৫০-এর পর বয়সে।

৪. রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম
বিশেষ করে রাতে পা নাড়ানোর প্রবণতা বেড়ে যায়, একভাবে পা স্থির রাখতে কষ্ট হয়। এতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে, পরদিন সারাদিন ক্লান্তি, ঝিমুনি ও বিরক্তিভাব দেখা দিতে পারে।

৫. পায়ে জ্বালাভাব ও স্নায়ুজনিত ব্যথা
পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির কারণে পায়ের তলায় বা আঙুলে হালকা থেকে তীব্র জ্বালা, জ্বালাপোড়া বা ছ্যাঁকা লাগার মতো অনুভূতি হতে পারে, যা সাধারণত রাতে বেশি হয়।

৬. দীর্ঘস্থায়ী পা-ব্যথা
স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে পায়ের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে পারে। এতে হাঁটা, দাঁড়িয়ে থাকা বা দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজ করতেও সমস্যায় পড়তে হয়।

৭. রক্ত চলাচলের সমস্যা ও রক্তস্বল্পতা
ভিটামিন বি১২-এর অভাবে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কমে গেলে শরীরজুড়ে দুর্বলতা দেখা দেয়। ত্বক ফ্যাকাসে বা কিছুটা হলুদাভ রং ধারণ করতে পারে, সামান্য পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট ও ক্লান্তি অনুভূত হয়—যা অনেক সময় রক্তস্বল্পতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।

৮. অনিদ্রা ও ঘুমের ব্যাঘাত
হাত-পায়ে ব্যথা, টান ধরা, রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম—এসব কারণে রাতে ভালো ঘুম হয় না। বারবার ঘুম ভেঙে গেলে পরের দিন কাজে মনোযোগ কমে যায়, মুড খারাপ থাকে ও সহজে বিরক্তি চলে আসে।

কী করবেন?

ইমিউনিটিকে মজবুত রাখা থেকে শুরু করে স্নায়ুর সুস্থতা বজায় রাখা—সবকিছুর সঙ্গেই ভিটামিন বি১২ গভীরভাবে জড়িত। তাই বিশেষ করে ৫০-ঊর্ধ্ব পুরুষদের ক্ষেত্রে—

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

প্রয়োজন হলে রক্ত পরীক্ষা করে ভিটামিন বি১২-এর মাত্রা যাচাই

পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী খাবারের তালিকায় বি১২ সমৃদ্ধ খাদ্য যোগ করা

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সাপ্লিমেন্ট না খাওয়া

খুব সাধারণ কিছু স্নায়ুর সমস্যা লক্ষণকে অবহেলা করলে তা ভবিষ্যতে বড় ধরনের স্নায়ুজনিত জটিলতার কারণ হতে পারে। তাই সময়মতো সচেতন হওয়া, পরীক্ষা করানো ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই হতে পারে সুস্থ থাকার সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।

সূত্র : আনন্দবাজার

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )