
সরকারি কলেজের একাডেমিক ভবনে শিক্ষকদের বসবাস!
ফরিদপুরের সদরপুর সরকারি কলেজে সরকারি কলেজে কোচিং বাণিজ্য ও একাডেমিক ভবন দখল করে বসবাসের অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস না নিয়ে ক্লাসরুমেই ব্যক্তিগত কোচিং বাণিজ্যে বেশি মনোযোগী হয়েছেন।
কলেজের একাডেমিক ভবনের একাধিক কক্ষ দখল করে ‘টিচার্স কোয়ার্টার’ বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন কিছু শিক্ষক। ফলে সরকারি কলেজের একাডেমিক ভবনের স্বাভাবিক প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
শ্রেণিকক্ষে কোচিং, সরকারি সম্পদে ব্যক্তিগত বাণিজ্য
স্থানীয় সূত্র ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দিনের বেলা ক্লাসরুম ব্যবহার হয় সীমিত সংখ্যক ক্লাসের জন্য, আর সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবারেও কলেজ খোলা থাকে মূলত সরকারি কলেজে কোচিং বাণিজ্য চালানোর জন্য। একই ক্লাসরুমে সরকারি ফ্যান, লাইট, বেঞ্চ ব্যবহার করে শিক্ষকেরা নিজেরা ব্যক্তিগত ব্যাচ পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ এসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন,
‘স্যাররা ক্লাসে ঠিকমতো পড়ান না। কিন্তু প্রাইভেটে গেলে বা তাদের কোচিং ব্যাচে নাম লিখালে ওই একই ক্লাসরুমে অনেক যত্ন করে পড়ান। সরকারি কলেজের ক্লাসরুম, ফ্যান, লাইট ব্যবহার করে ব্যক্তিগত ব্যবসা করাটা স্পষ্ট অনিয়ম।’
কলেজ সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০ জন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও নিয়মিত কলেজে আসেন অর্ধেকেরও কম। ফলে শিক্ষাদান ব্যাহত হওয়ায় অতিরিক্ত চারজন ভলান্টিয়ার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নজরদারির দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে বছরের পর বছর ধরে এসব অনিয়ম চলে আসছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
শিক্ষার্থীদের আশাভঙ্গ, অভিভাবকদের ক্ষোভ
দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম (ছদ্মনাম) বলেন,
‘আমরা ভালো পড়াশোনার আশায় সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু এখানে এখন পড়াশোনার চেয়ে স্যারদের ব্যবসার চিন্তাই বেশি। একাডেমিক ভবনে স্যাররা থাকেন, ক্লাসরুমে কোচিং হয়—এটা কেমন নিয়ম? আমরা সরকারি কলেজে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করে সুষ্ঠু ক্লাস নেওয়ার দাবি জানাই।’
অভিভাবকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সদরপুর সরকারি কলেজে চরম অব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক শিথিলতা ও নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে শিক্ষার পরিবেশ দিন দিন খারাপ হচ্ছে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠান এখন অনেকটাই ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের মতো চলে।
তাঁদের অভিযোগ,
‘সন্তানকে সরকারি কলেজে পাঠিয়েছি ভালো শিক্ষার আশায়। এখন দেখছি, ক্লাসের চেয়ে কোচিংয়ের আধিপত্য বেশি। শিক্ষকরা যদি নিয়মিত ক্লাস না নিয়ে শুধু কোচিং নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, তাহলে গরিব ছাত্রছাত্রীরা কোথায় যাবে? আমরা কলেজের এই সরকারি কলেজে কোচিং বাণিজ্য ও অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত ও ব্যবস্থা চাই।’
শিক্ষকদের ব্যাখ্যা
একাডেমিক ভবনে বসবাসকারী এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
‘থাকার মতো পর্যাপ্ত সরকারি কোয়ার্টার নেই। তাই কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়েই আমরা এখানে থাকছি। এতে ক্লাসের ক্ষতি হচ্ছে বলে আমি মনে করি না।’
শ্রেণিকক্ষে কোচিং নিয়ে আরেকজন শিক্ষক বলেন,
‘কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়ে অনেক আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের অনুরোধে অতিরিক্ত সময় কোচিং করাচ্ছি। একে শুধু ব্যবসা বলা ঠিক হবে না। অনেক ছাত্র-ছাত্রীই এভাবে উপকৃত হচ্ছে।’
কর্তৃপক্ষ কী বলছে
সদরপুর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. এনামুল হক বলেন,
‘শিক্ষকদের উপস্থিতি ও নিয়মিত ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’
একাডেমিক ভবনে শিক্ষকদের বসবাস ও শ্রেণিকক্ষে সরকারি কলেজে কোচিং বাণিজ্য চালানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
‘সদরপুরে থাকার উপযোগী পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকরা একাডেমিক ভবনে থাকছেন। আর কোচিং বাণিজ্যের বিষয়টি শুধু আমাদের কলেজে নয়, অনেক সরকারি কলেজেই হচ্ছে। তারা মৌখিক পারমিশন নিয়ে কলেজের রুম ব্যবহার করে কোচিং করাচ্ছেন।’
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ শাওন বলেন,
‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

