
এমএইচ৩৭০ ফ্লাইট অনুসন্ধানে ফের গভীর সমুদ্র তল্লাশি
মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের নিখোঁজ এমএইচ৩৭০ ফ্লাইট অনুসন্ধান আবার নতুন করে শুরু হচ্ছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আলোচিত এই মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স নিখোঁজ বিমান–এর ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পেতে চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে পুনরায় গভীর সমুদ্রে নামবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সামুদ্রিক রোবোটিক্স কোম্পানি ‘ওশান ইনফিনিটি’।
মালয়েশিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওশান ইনফিনিটি ৩০ ডিসেম্বর থেকে মোট ৫৫ দিন পর্যায়ক্রমে ভারত মহাসাগরের নির্দিষ্ট এলাকায় অনুসন্ধান চালাবে। যেসব সেক্টরে বিমানের ধ্বংসাবশেষ থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি—সেসব এলাকাকেই এবার অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এমএইচ৩৭০ ট্র্যাজেডিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে নতুন করে আশার আলো জাগাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের বক্তব্য, বহু বছরের বেদনা ও অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কমপক্ষে গ্রহণযোগ্য একটি উত্তর খুঁজে পেতেই এই নতুন অনুসন্ধান মিশন।
চলতি বছরের মার্চে মালয়েশিয়া সরকার ওশান ইনফিনিটিকে ‘নো ফাইন্ড, নো ফি’ শর্তে এমএইচ৩৭০ ফ্লাইট অনুসন্ধান চালানোর অনুমোদন দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভারত মহাসাগরের অতিরিক্ত আরও প্রায় ১৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় তল্লাশি হবে। নির্ধারিত অঞ্চলে এমএইচ৩৭০–এর কোনো ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেলে তবেই কোম্পানিটিকে ৭০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করবে সরকার। খারাপ আবহাওয়ার কারণে এপ্রিলের নির্ধারিত সময়ের অনুসন্ধান সাময়িকভাবে স্থগিত ছিল।
২০১৪ সালের ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটি রাডার থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। এমএইচ৩৭০ নম্বর এই বিমানে থাকা ২৩৯ জনের বেশিরভাগই ছিলেন চীনা নাগরিক। স্যাটেলাইট তথ্যের বিশ্লেষণে ধারণা করা হয়, নির্ধারিত পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে বিমানটি দক্ষিণ দিকে ভারত মহাসাগরের দূরবর্তী অংশে চলে যায় এবং সেখানেই বিধ্বস্ত হয়।
এরপর অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও আরও কয়েকটি দেশের যৌথ উদ্যোগে ইতিহাসের অন্যতম ব্যয়বহুল বহুজাতিক অনুসন্ধান অভিযান চালানো হয়। ভারত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ অংশ চষে ফেলেও এমএইচ৩৭০ ফ্লাইট অনুসন্ধান কোনো সুনির্দিষ্ট অবস্থান নির্ণয় করতে পারেনি। শুধু পূর্ব আফ্রিকার উপকূল ও ভারত মহাসাগরের কয়েকটি দ্বীপে ভেসে আসা কিছু ধ্বংসাবশেষের টুকরোকে এমএইচ৩৭০–এর অংশ বলে মনে করা হয়।
২০১৮ সালে ওশান ইনফিনিটি তাদের নিজস্ব অর্থায়নে আরেক দফা অনুসন্ধান চালিয়েছিল; কিন্তু সেই মিশনেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি পাওয়া যায়নি। তবু নিখোঁজ যাত্রীদের পরিবার এবং বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন প্রযুক্তি ও আপডেটেড ডেটা বিশ্লেষণ কাজে লাগিয়ে এবার এমএইচ৩৭০ ফ্লাইট অনুসন্ধান থেকে বাস্তব কোনো ফল আসার আশা এখনও পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি।
তাদের প্রত্যাশা—নতুন অনুসন্ধান অভিযানে অন্তত এতটুকু জানা যাবে, কোথায় এবং কীভাবে নিখোঁজ হলো আধুনিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত এই যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটি।

