
মাদকবাহী নৌকায় দ্বিতীয় হামলা নিয়ে বিতর্কে হোয়াইট হাউজ
ভেনেজুয়েলার কাছে মাদকবাহী নৌকায় দ্বিতীয় হামলা পরিচালনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ভেনেজুয়েলার সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকায় মার্কিন বাহিনীর প্রথম হামলার পর, একই নৌকায় দ্বিতীয় দফা হামলার নির্দেশ দেন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর এক শীর্ষ কমান্ডার। সোমবার হোয়াইট হাউজ মাদকবাহী নৌকায় দ্বিতীয় হামলা সংক্রান্ত এই তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট জানান, অ্যাডমিরাল ফ্র্যাংক ব্র্যাডলি তাঁর আইনি ক্ষমতার মধ্যেই অতিরিক্ত হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ দ্বিতীয় হামলার অনুমোদন দিয়েছেন; তবে ওয়াশিংটন পোস্টে যে “সবাইকে হত্যা করার” নির্দেশের কথা বলা হয়েছে, তা সঠিক নয়।’
মিডিয়া প্রতিবেদনগুলো বলছে, ভেনেজুয়েলার সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকায় প্রথম হামলার পর দুজন লোক জ্বলন্ত নৌকার সঙ্গে লেগে থেকে বেঁচে ছিলেন। এরপরই সেই মাদকবাহী নৌকায় দ্বিতীয় হামলা চালানো হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মার্কিন কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই দলের আইনপ্রণেতারাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং পৃথকভাবে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটে চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর।
ক্যারোলিন লিভিট আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন—প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ঘোষিত মাদক গোষ্ঠীগুলোকে যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী লক্ষ্যবস্তু করা যাবে। তবে হোয়াইট হাউজ এখনো স্পষ্ট করে জানায়নি, প্রথম হামলায় কেউ বেঁচে ছিলেন কি না, কিংবা মাদকবাহী নৌকায় দ্বিতীয় হামলা কি ওই ব্যক্তিদের হত্যার উদ্দেশ্যেই ছিল কি না।
২ সেপ্টেম্বরের ওই সামরিক অভিযান নিয়ে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, নৌকায় থাকা সবাইকে “হত্যা করার” নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এ ধরনের নির্দেশ আন্তর্জাতিক আইন ও যুদ্ধাপরাধের প্রশ্ন তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাও উঠে এসেছে আলোচনায়। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ এই অভিযোগকে ‘মিথ্যা, উত্তেজনাপূর্ণ ও মানহানিকর’ আখ্যা দিয়ে টুইটার (এক্স)–এ অ্যাডমিরাল ব্র্যাডলির প্রতি পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সাগর এলাকায় সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে এবং ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার উপকূলের আন্তর্জাতিক জলসীমায় একাধিক সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকায় হামলা চালিয়েছে। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে এসব অভিযানে ৮০ জনের বেশি নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
মার্কিন প্রশাসনের দাবি, এসব অভিযান যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার অংশ; কারণ ওই নৌকাগুলোতে অবৈধ মাদক বহন করা হচ্ছিল। তবে ধারাবাহিক এই হামলা ও মাদকবাহী নৌকায় দ্বিতীয় হামলা ঘিরে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একাধিকবার প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, তিনি প্রয়োজনে ভেনেজুয়েলায় মার্কিন স্থলবাহিনী পাঠানোর বিষয়টিও বিবেচনা করছেন।
ঘটনাগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কক্ষের আইনপ্রণেতারা নজরদারি জোরদার করেছেন। সেনেটের সশস্ত্র বাহিনী বিষয়ক কমিটি জানিয়েছে, তারা পুরো ঘটনা তদন্ত করবে এবং অভিযানের দায়িত্বে থাকা অ্যাডমিরাল ব্র্যাডলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। কমিটির চেয়ারম্যান সেনেটর রজার উইকার বলেন, হামলার আদেশ সংক্রান্ত সব অডিও–ভিডিও প্রমাণ সংগ্রহ করা হবে।
অন্যদিকে প্রতিনিধি পরিষদের সশস্ত্র বাহিনী বিষয়ক কমিটিও জানিয়েছে, তারা যৌথভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত পরিচালনা করবে। ক্যারিবীয় অঞ্চলে সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান, ভেনেজুয়েলার সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকা এবং মাদকবাহী নৌকায় দ্বিতীয় হামলা–এসব বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ ইতোমধ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেখানে এসব অভিযানের লক্ষ্য, সামরিক কৌশল এবং আন্তর্জাতিক আইনগত বৈধতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

