
পশ্চিম তীরে বিদেশি স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর বসতি স্থাপনকারীদের হামলা
ইসরায়েলি অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের হামলা, পশ্চিম তীরে ৪ বিদেশি আহত, পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী আক্রমণ—এই তিনটি শব্দগুচ্ছেই ধরা পড়ে সাম্প্রতিক সহিংস হামলার চিত্র। ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণে পশ্চিম তীরে তিনজন ইতালীয় এবং একজন কানাডিয়ান নাগরিক আহত হয়েছেন। তাদের জেরিকোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এএফপি। ফিলিস্তিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘ওয়াফা’ তাদেরকে ‘আন্তর্জাতিক অ্যাক্টিভিস্ট’ বা আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বর্ণনা করেছে।
রোমের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, গত রাতে পশ্চিম তীরে থাকা তিনজন ইতালীয় আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবীর ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা, এবং এ ঘটনার পর তারা এখনো স্তব্ধ ও হতবাক। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বসতি স্থাপনকারীরা স্বেচ্ছাসেবীদের বাড়িতে প্রবেশ করে হামলা চালায় এবং তাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়।
জেরিকো সরকারি হাসপাতালের পরিচালক রিয়াদ ঈদ এএফপিকে বলেন, বসতি স্থাপনকারীদের হাতে মারধরের শিকার হওয়ার পর চার বিদেশি তাদের হাসপাতালে আসেন। তিনি জানান, আহতদের কারও মুখে ও বুকে আঘাতের চিহ্ন ছিল, আর একজনকে শরীরের একটি ‘সংবেদনশীল অংশে’ মারধর করা হয়। তাদের এক্স–রে ও আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানসহ প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা শেষে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আহতদের মধ্যে একজনের শরীরে দৃশ্যমান আঘাত ছিল এবং তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি। তিনি এএফপিকে বলেন, তারা তিনজন ইতালীয় ও একজন কানাডিয়ান, যারা পশ্চিম তীরের মধ্যাঞ্চলে জেরিকোর পশ্চিম প্রান্তের ডুয়ুক এলাকায় অবস্থান করছিলেন। তার ভাষ্যে, ‘আমরা রাতে ঘুমাচ্ছিলাম… হঠাৎ করে ১০ জন মুখোশধারী বসতি স্থাপনকারী আসে। তাদের মধ্যে দুজনের হাতে বন্দুক ছিল, অন্যদের হাতে লাঠি।’
তিনি আরও জানান, প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে চলা এই হামলায় তাকে একাধিকবার মুখে, পাঁজরে ও কোমরে লাথি মারা হয়। হামলাকারীরা কেবল মারধর করেই ক্ষান্ত হয়নি; তাদের সব ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে যায়—এর মধ্যে ছিল পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও ব্যাংক কার্ড। মারধরের জেরে পরবর্তীতে এক্স–রে, ব্যথানাশক ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা নিতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে আরও বলেছে, বসতি স্থাপনকারীরা স্বেচ্ছাসেবীদের বাড়িতে প্রবেশ করে আক্রমণ চালিয়েছে এবং সব ব্যক্তিগত সামগ্রী চুরি করে নিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। বিবৃতিতে জানানো হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং জেরুজালেমে ইতালির কনসাল জেনারেলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
১৯৬৭ সাল থেকে দখলকৃত পশ্চিম তীরের বিভিন্ন বসতিতে বর্তমানে ৫ লাখের বেশি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী বাস করছে। একই এলাকায় বসবাস করছেন প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, বসতি স্থাপনকারীদের ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ফিলিস্তিনি গ্রাম ও আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবীদের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার জেরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিম তীরেও সহিংসতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৬ সালের পর থেকে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার দিক থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর ছিল সবচেয়ে খারাপ মাস—সে মাসে মোট ২৬৪টি হামলায় হতাহত হওয়া ছাড়াও ব্যাপক সম্পত্তি দখল ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

