
খেলার সময় প্লেয়াররা চুইংগাম চিবান কেন জানুন
খেলার সময় চুইংগাম চিবানো, ক্রিকেটাররা চুইংগাম কেন চিবায়, প্লেয়াররা চুইংগাম চিবানোর কারণ—এগুলো নিয়ে দর্শকদের কৌতূহলের শেষ নেই। টিভি পর্দায় প্রায়ই দেখা যায়, ম্যাচের টানটান মুহূর্তে কারো ঠোঁট নাড়ছে, কেউ একটানা কিছু একটা চিবিয়ে চলেছেন। অনেকে একে শুধুই স্টাইল মনে করলেও, এর পেছনে আছে বেশ কিছু বাস্তব ও বৈজ্ঞানিক কারণ।
চাপ কমাতে ও মানসিকভাবে শান্ত থাকতে
ক্রিকেটসহ যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক খেলায় চাপ (স্ট্রেস) খুব বেশি। ১৪০ কিলোমিটার গতির বল মোকাবিলা করা ব্যাটসম্যান, শেষ মুহূর্তে ক্যাচ ধরার অপেক্ষায় থাকা ফিল্ডার—সবারই দরকার ঠাণ্ডা মাথা ও মানসিক স্থিরতা।
গবেষণায় দেখা গেছে, চুইংগাম চিবালে ব্রেনে রিল্যাক্স রেসপন্স বাড়ে, স্ট্রেস হরমোনের প্রভাব কিছুটা কমে। ফলে খেলোয়াড়রা চাপের মধ্যেও তুলনামূলক শান্ত থাকতে পারেন। এই কারণে অনেক কোচ ও প্লেয়ার চুইংগামকে এক ধরনের সাইকোজেনিক টুল বা মানসিক সহায়ক অভ্যাস হিসেবে ব্যবহার করেন।
মুখ শুকিয়ে যাওয়া ও অস্বস্তি কমাতে
গরম আবহাওয়া, দীর্ঘসময় ফিল্ডিং, দৌড়ঝাঁপ ও উত্তেজনার কারণে মুখ দ্রুত শুকিয়ে যেতে পারে। মুখ শুকিয়ে গেলে কথা বলা, নির্দেশ দেওয়া বা চিৎকার করে ফিল্ড প্লেসমেন্ট বোঝানোও কঠিন হয়।
চুইংগাম মুখে রাখলে লালা নিঃসরণ বেড়ে যায়, ফলে মুখ আর্দ্র থাকে ও শুকনোভাব কমে। এতে প্লেয়াররা স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে, চিৎকার করে কল দিতে ও নির্দেশ দিতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।
অভ্যাস, রুটিন ও আত্মবিশ্বাস
অনেক প্লেয়ারের জন্য চুইংগাম এক ধরনের ম্যাচ রুটিন বা ব্যক্তিগত রিচ্যুয়াল। যেমন কেউ সবসময় একই গ্লাভস পরে, কেউ নির্দিষ্টভাবে পিচে পা রাখেন—তেমনি কেউ ম্যাচে সবসময় চুইংগাম চিবান।
এই অভ্যাস তাদের ভেতরে এক ধরনের পরিচিত ও নিরাপদ অনুভূতি তৈরি করে, যা আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং নিজের খেলায় মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
বেশি পানি খাওয়ার প্রবণতা তৈরি করে
চুইংগাম সরাসরি শরীরে পানি বাড়ায় না, কিন্তু চিবোতে থাকলে মুখে লালার পরিমাণ বাড়ে। এতে অনেক সময় খেলোয়াড়ের তৃষ্ণা বেশি অনুভূত হয়, ফলে তিনি বারবার পানি পান করেন।
বিশেষ করে গরম দেশগুলোতে, যেখানে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেশি, সেখানে চুইংগাম এক ধরনের রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করে—মনে করিয়ে দেয়, পানি খেতে হবে, শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে হবে।
একাগ্রতা ও ফোকাস বাড়াতে সাহায্য করে
দীর্ঘ সময় ধরে চলা ম্যাচে মনোযোগ ধরে রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কয়েক সেকেন্ডের অন্যমনস্কতা গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ মিস বা ভুল সিদ্ধান্তের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
চুইংগাম চিবানো এক ধরনের ছোট, ধারাবাহিক কাজ; যা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে ও হালকা ফোকাস তৈরি করে। এতে অনেকের ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ একাগ্রতা ধরে রাখা সহজ হয়, বিশেষ করে ফিল্ডারদের জন্য এটা বেশ কার্যকর।
প্রতিক্রিয়ার সময় (রিঅ্যাকশন টাইম) উন্নত করতে পারে
কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পাওয়া গেছে, চুইংগাম চিবালে সতর্কতা (alertness) কিছুটা বাড়ে এবং স্নায়ুতন্ত্র থেকে শরীরের অন্য অংশে সিগনাল যাওয়ার গতি সামান্য উন্নত হয়।
ক্রিকেটে বল ব্যাটে আসতে যতটুকু সময় লাগে, ক্যাচ বা স্ট্রোক নেওয়ার প্রতিক্রিয়া সময় (রিঅ্যাকশন টাইম) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই অনেকের মতে, চুইংগাম চিবানো সামান্য হলেও রিঅ্যাকশন টাইমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
দ্রুত শক্তি জোগাতে সহায়ক
অনেক চুইংগামে অল্প গ্লুকোজ বা সুগার থাকে, যা তাৎক্ষণিক শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। দীর্ঘ সময় ফিল্ডিং, প্রচণ্ড গরম, ম্যাচের শেষ ভাগে ক্লান্তি– এসব অবস্থায় চুইংগামের সামান্য গ্লুকোজ প্লেয়ারকে মানসিকভাবে ‘রিফ্রেশ’ অনুভব করাতে পারে।
সব মিলিয়ে খেলার মাঠে চুইংগাম চিবানো কোনো প্লেয়ারের শুধু স্টাইল বা ফ্যাশন নয়। এর মাধ্যমে একদিকে তারা চাপ কমান, ফোকাস ও রিঅ্যাকশন টাইম বাড়ান, অন্যদিকে মুখের আর্দ্রতা, হালকা এনার্জি ও মানসিক স্থিরতাও বজায় রাখেন। তাই আধুনিক ক্রিকেট ও অন্যান্য খেলায় চুইংগাম এখন অনেকের পারফরম্যান্স রুটিনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

