
৪০-এর পর হার্ট সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম
৪০ পেরোনোর পর ৪০-এর পর হার্ট সুস্থ রাখার নিয়ম, হার্ট সুস্থ রাখার উপায়, হার্টের যত্নের নিয়ম মেনে চলা যে কত জরুরি—তা অনেকেই দেরিতে বুঝতে পারেন। বাইরে থেকে শরীর শক্তিশালী দেখালেও এই বয়সের পর ভেতরে ভেতরে বার্ধক্যের প্রভাব পড়তে শুরু করে। তাই দীর্ঘদিন সুস্থ থাকতে চাইলে চল্লিশের ঘরেই হৃদযন্ত্রের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে অনিয়মিত জীবনযাপন ও শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ তখন আর সহ্য করতে পারে না হার্ট।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
৪০-এর পর শরীরের বিপাকক্রিয়া ধীরে হয়, ফলে হার্ট অস্বাস্থ্যকর চর্বি, অতিরিক্ত চিনি ও নুনের প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। তাই
স্যাচুরেটেড ফ্যাট (ভাজা-ভুজি, চর্বিযুক্ত লাল মাংস) কমাতে হবে
লবণ ও চিনি নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খেতে হবে
কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ ও শরীরের প্রদাহজনিত সমস্যা অবহেলা করা যাবে না
ওমেগা–৩ সমৃদ্ধ মাছ, শাকসবজি, ফল, পূর্ণ শস্য, বাদাম ও ডাল জাতীয় খাবার নিয়মিত রাখলে ৪০-এর পর হার্ট সুস্থ রাখার নিয়ম মানা সহজ হয়।
ওজন ও ব্যায়াম—হার্টের সবচেয়ে বড় বন্ধু
হার্ট ভালো রাখার অন্যতম কার্যকর উপায় হলো নিয়মিত শরীরচর্চা।
প্রতিদিন অন্তত ২০–৩০ মিনিট হাঁটা, দ্রুত হাঁটা, সাইক্লিং বা হালকা জগিং
সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার অ্যারোবিক এক্সারসাইজ
সঙ্গে সপ্তাহে ২ দিন হালকা স্ট্রেন্থ ট্রেনিং করলে পেশি ও হার্ট দুটোই শক্তিশালী হয়
ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে, যা হার্ট সুস্থ রাখার উপায়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাথমিক শর্ত।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
দীর্ঘদিন মানসিক চাপ থাকলে কর্টিসলসহ স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়, যা সরাসরি হৃদযন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কাজের চাপ, পারিবারিক দুশ্চিন্তা বা অর্থনৈতিক টেনশন—সব মিলিয়ে ৪০-এর পর মানসিক চাপ যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে হার্টের ক্ষতি হয় নীরবে।
প্রতিদিন কিছু সময় নিজের জন্য রাখুন
নিয়মিত নামাজ, ধ্যান, দোয়া, তিলাওয়াত বা যোগব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করুন
মন ভালো রাখা এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখাও ৪০-এর পর হার্ট সুস্থ রাখার নিয়মের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি
শরীরে দৃশ্যমান সমস্যা না থাকলেও রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা খুবই প্রয়োজনীয়। উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল অনেক সময় কোনো লক্ষণ ছাড়াই বাড়তে থাকে, যা হঠাৎ স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তৈরি করে।
প্রতি ১–২ মাসে রক্তচাপ মাপুন
৪–৬ মাস অন্তর লিপিড প্রোফাইল (কোলেস্টেরল) পরীক্ষা করা ভালো
ডায়াবেটিস, ধূমপান, পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাস বা স্থূলতা থাকলে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে
কার্ডিয়োলজিস্টের পরামর্শে ইসিজি, ইকোসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করিয়ে হার্টের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ধারণা রাখা ৪০-এর পর হার্টের যত্নের নিয়মের অংশ হওয়া উচিত।
লাইফস্টাইল বদলালেই বদলাবে হার্টের ভবিষ্যৎ
ধূমপান ছাড়ার সিদ্ধান্ত, জাংক ফুড কমানো, বেশি করে পানি পান, নিয়মিত হাঁটা, পর্যাপ্ত ঘুম—এসব ছোট ছোট অভ্যাসই ভবিষ্যতের বড় বিপদ থেকে হার্টকে রক্ষা করতে পারে। চল্লিশের পর শুধু ওষুধ নয়, সচেতন জীবনযাপনই হতে পারে শক্তিশালী হৃদযন্ত্রের সবচেয়ে বড় গ্যারান্টি।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও রুটিন চেকআপ—এই চারটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়েই গড়ে ওঠে ৪০-এর পর হার্ট সুস্থ রাখার নিয়ম। এখনই একটু সচেতন হলে আগামীর সুস্থ হার্ট, সুস্থ জীবন—দুইই নিশ্চিত করা সম্ভব।

