
যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নীতি স্থগিত ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা
যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নীতি স্থগিত করে সব ধরনের অ্যাসাইলাম আবেদনের সিদ্ধান্ত আপাতত বন্ধ ঘোষণা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ওয়াশিংটন ডিসিতে দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে গুলি করে হত্যার ঘটনার পরই এই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসের (ইউএসসিআইএস) পরিচালক জোসেফ এডলো।
শুক্রবার এক্স (আগের টুইটার)–এ দেওয়া পোস্টে জোসেফ এডলো জানান, যতক্ষণ না তারা নিশ্চিত হতে পারছেন যে প্রতিটি বিদেশিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আশ্রয় সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকবে। অর্থাৎ নতুন করে কেউ আশ্রয়ের আবেদন করলেও এখন কোনো সিদ্ধান্ত অনুমোদন, প্রত্যাখ্যান বা চূড়ান্তভাবে বন্ধ করা হবে না; কেবল প্রক্রিয়াগত কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে, সিদ্ধান্তের পর্যায়ে গিয়ে তা স্থগিত রাখা হবে।
এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সব ‘থার্ড ওয়ার্ল্ড’ দেশ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত করতে চান। যদিও তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কোন কোন দেশকে এ তালিকায় রাখবেন তা উল্লেখ করেননি। সাম্প্রতিক গুলির ঘটনার পর এই অবস্থান আরও কঠোর হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে সামগ্রিক অভিবাসন নীতি আরও কঠোর হয়েছে—এর অংশ হিসেবে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী অভিবাসীদের গণহারে বহিষ্কার, শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা এবং যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া প্রায় সবার স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্বের অধিকার বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নীতি স্থগিত করাও সেই কড়াকড়ির ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির আওতাধীন ইউএসসিআইএস কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন কোনো আশ্রয় আবেদন এখনই অনুমোদন, প্রত্যাখ্যান বা চূড়ান্তভাবে বন্ধ না করেন। সিবিএস নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্মকর্তারা ফাইল প্রসেসিং চালিয়ে যেতে পারবেন, তবে সিদ্ধান্তের পর্যায়ে পৌঁছালে তা স্থগিত রাখতে হবে।
বুধবারের গুলির ঘটনায় আহত ন্যাশনাল গার্ডের এক নারী সদস্য বৃহস্পতিবার মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই হামলার জন্য দায়ী করা হচ্ছে আফগান বংশোদ্ভূত একজন অভিযুক্তকে। কর্মকর্তারা জানান, রহমানুল্লাহ লাখানওয়াল নামের ওই ব্যক্তি ২০২১ সালে বিশেষ একটি কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিদের জন্য দেওয়া বিশেষ অভিবাসন সুরক্ষার মাধ্যমেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন।
সিআইএ–এর বর্তমান পরিচালক জানিয়েছেন, লাখানওয়াল পূর্বে সংস্থাটির সঙ্গে কাজ করেছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় ও সিআইএ–এর সঙ্গে কাজ শুরুর আগে দুই ধাপেই তাঁর ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করা হয়। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর শৈশবের এক বন্ধু জানান, ইউনিটের সঙ্গে কাজ করার পর থেকে লাখানওয়াল মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন।
লাখানওয়াল ২০২৪ সালে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন এবং ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর চলতি বছর তাঁর আবেদন অনুমোদিত হয় বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়। এ ঘটনার পর ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে লেখেন, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থা পুনর্গঠনে সহায়ক হবে, যা তাঁর মতে, অনেক আমেরিকানের জীবনযাত্রার মান ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
এদিকে ইউএসসিআইএস জানিয়েছে, তারা ১৯টি দেশ থেকে আগত অভিবাসীদের দেওয়া গ্রিন কার্ড পুনঃপর্যালোচনা করবে। যদিও ওই ঘোষণায় সরাসরি গুলির ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়নি, তবে হোয়াইট হাউসের জুন মাসের এক নীতিগত ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়, যেখানে আফগানিস্তান, কিউবা, হাইতি, ইরান, সোমালিয়া ও ভেনেজুয়েলাসহ কয়েকটি দেশের নাম ছিল। কীভাবে এই পুনঃপর্যালোচনা করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
সব মিলিয়ে বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নীতি স্থগিত করে যে বিরতি ঘোষণা করা হয়েছে, তা ভবিষ্যতে আরও কড়াকড়ি অভিবাসন নীতির ইঙ্গিতও বহন করতে পারে।

