
ভালো মন্দ সময়ে রাসুলের দোয়া কী ছিল
আনন্দ, সুখ, দুঃখ কিংবা কষ্ট—জীবনের প্রতিটি অবস্থাতেই মুমিনের করণীয় কী হবে, তা সুন্দরভাবে শিখিয়ে দিয়েছেন প্রিয় নবি মুহাম্মদ (সা.)। তাই অনেক আলেমই বলেন, ভালো মন্দ সময়ে রাসুলের দোয়া শিখে নিতেই হবে, যেন প্রতিটি অবস্থায় আল্লাহর দিকে রুজু করা যায়। ইসলামের দৃষ্টিতে আনন্দ–সুখ যেমন আল্লাহর নেয়ামত, তেমনি দুঃখ–কষ্টও তাঁর পক্ষ থেকেই একটি পরীক্ষা।
হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো পছন্দনীয়, সুখের বা কল্যাণকর কিছু দেখলে এই দোয়া পড়তেন—
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي بِنِعْمَتِهِ تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ
উচ্চারণ:
“আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি বি নিআমাতিহি তাতিম্মুস সালিহাত।”
অর্থ:
“সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যার নেয়ামতেই সব সৎকর্ম পূর্ণতা লাভ করে।”
এই দোয়ার মাধ্যমে তিনি আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন যে, কোনো ভালো কাজ সম্পন্ন হওয়া, সফলতা লাভ করা, আনন্দ পাওয়া—এসব কিছুর পেছনে আল্লাহর নেয়ামতই মূল। তাই জীবনের যে কোনো অর্জন নিয়ে গর্ব না করে, বিনয় সহকারে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা একজন মুমিনের দায়িত্ব।
অন্যদিকে, যখন কোনো অপছন্দনীয়, দুঃখজনক, কষ্টদায়ক বা মন খারাপ করার মতো ঘটনা ঘটত, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আরেকটি দোয়া পড়তেন—
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ
উচ্চারণ:
“আলহামদু লিল্লাহি আলা কুল্লি হাল।”
অর্থ:
“সব প্রশংসা সব অবস্থায়ই মহান আল্লাহর জন্য।”
এই দোয়াটি মুমিনের অন্তরে এমন একটি বিশ্বাস গড়ে তোলে যে, পরিস্থিতি যেমনই হোক—আনন্দ হোক বা দুঃখ—আল্লাহই সব কিছুর মালিক, তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। তাই ভালো অবস্থায় যেমন উচ্ছ্বসিত হয়ে আল্লাহকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়, তেমনি কষ্টের সময়েও অভিযোগ নয়; বরং ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা অবলম্বন করতে হবে।
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন,
রাসুল (সা.) যখন কোনো পছন্দনীয় কিছু দেখতেন, তিনি বলতেন—
“আলহামদুলিল্লাহ আল্লাযি বিনিমাতিহি তাতিম্মুস সালিহাত।”
আর যখন কোনো অপছন্দনীয় কিছু দেখতেন, তিনি বলতেন—
“আলহামদুলিল্লাহি আলা কুল্লি হাল।”
(ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৮০৩)
এই হাদিসের আলোকে আলেমরা বলেন, একজন মুমিনের জবান সব সময় আল্লাহর প্রশংসায় ভরা থাকা উচিত—সুখে যেমন, তেমনি দুঃখেও। ভালো মন্দ সময়ে রাসুলের দোয়া আমাদের শিখিয়ে দেয়, জীবনের প্রতিটি অবস্থাতেই আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও তওয়াক্কুলের সঙ্গে তাঁর দিকে ফিরে আসাই সত্যিকারের ঈমানের বহিঃপ্রকাশ।
যে ব্যক্তি আনন্দের সময়ও আল্লাহকে স্মরণ করে, আর কষ্টের সময়ও আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে বিশেষ রহমত ও পুরস্কারের সুসংবাদ।

