গজলডোবা বাঁধে তিস্তা রুদ্ধ, মুক্তি চায় দুই কোটি মানুষ

গজলডোবা বাঁধে তিস্তা রুদ্ধ, মুক্তি চায় দুই কোটি মানুষ

55 / 100 SEO Score

গজলডোবা বাঁধে তিস্তা—এই একটি বাঁধই বদলে দিয়েছে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার মানুষদের জীবন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবারও আলোচনায় এসেছে বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা। তারই ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে নীলফামারীতে চীনের সহায়তায় এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা গজলডোবা বাঁধে তিস্তা সংকট সমাধানে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

তিস্তাপাড়ের মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস—এই হাসপাতাল প্রকল্পই হতে পারে বৃহত্তর তিস্তা মহাপরিকল্পনার প্রথম ইতিবাচক সংকেত।

গজলডোবা বাঁধে তিস্তা—২৫ বছরের ‘শ্বাসরুদ্ধ’ ইতিহাস

একসময় উত্তরবঙ্গের জীবনরেখা ছিল তিস্তা। কিন্তু ১৯৯৮ সালে ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের পর গজলডোবা বাঁধে তিস্তা আটকে যায়, শুকিয়ে যায় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ। আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে পানি নিয়ন্ত্রণের কারণে নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার মানুষের জীবন হয়ে পড়ে দুর্বিষহ।

ফসলহানি, নদীভাঙন, পানির সংকট আর পরিবেশগত ক্ষয়—সব মিলিয়ে দুই কোটি মানুষের জীবন জড়িয়ে যায় গজলডোবা বাঁধে তিস্তার দুঃসহ বাস্তবতায়।

তিস্তা চুক্তির ইতিহাস—কাগজে আছে, বাস্তবে নেই

১৯৮৩ সালে শুকনো মৌসুমে ৩৬% বাংলাদেশ ও ৩৯% ভারতের পানিবণ্টনের যে চুক্তি হয়েছিল, তা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি।

২০১১ সালে সমান পানিবণ্টনের খসড়া তৈরি হলেও সেটিও আলোর মুখ দেখেনি।
ফলে গজলডোবা বাঁধে তিস্তা আজো বাংলাদেশ অংশে দানবের মতো দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে করেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।

চীনের হাসপাতাল প্রকল্প—তিস্তা উন্নয়ন কি নতুনভাবে শুরু হচ্ছে?

২০২১ সালে চীন তিস্তা মহাপরিকল্পনার নকশা তৈরি করে এবং ২০২৩ সালে বাস্তবায়নের প্রস্তুতিও নেয়। কিন্তু ভারতের আপত্তিতে প্রকল্প থমকে যায়।

সরকার পরিবর্তনের পর দৃশ্যপট বদলাচ্ছে। নীলফামারীর দারোয়ানীতে চীনের সহায়তায় এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণকে অনেক বিশেষজ্ঞ গজলডোবা বাঁধে তিস্তা সমস্যার সমাধানের দিকেই নতুন ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।

বিশ্লেষক ত্বহা হুসাইন বলেন—
“চীন এ অঞ্চলে কাজ শুরু করলে তা ভবিষ্যৎ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ইতিবাচক বার্তা।”

উন্নয়ন গবেষক উমর ফারুক মনে করেন—
“এটি ভারতের প্রতিক্রিয়া বোঝার একটি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ।”

✊ তিস্তাপাড়ের মানুষের আশা—ডিসেম্বরে মহাপরিকল্পনা শুরু

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘তিস্তা বাঁচাও’ আন্দোলন আরও জোরদার হয়েছে। নদীর বাংলাদেশ অংশজুড়ে ১১৫ কিলোমিটার এলাকায় চলছে মানববন্ধন, সমাবেশ, গণস্বাক্ষর কর্মসূচি।

তাদের একটাই দাবি—
ডিসেম্বরেই মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু হোক এবং গজলডোবা বাঁধে তিস্তা মুক্ত হোক।

তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেন—
“এটি চীনের না, ভারতেরও না—বাংলাদেশের নিজস্ব প্রকল্প। ডিসেম্বরেই কাজ শুরু চাই।”

🌱 উত্তরের মানুষ শুধু একটি পরিবর্তন চায়—তিস্তা আবার বয়ে যাক

দুই কোটি মানুষের প্রত্যাশা—
গজলডোবা বাঁধে তিস্তা রুদ্ধ নয়, মুক্ত হোক; নদী আবারও ফিরিয়ে আনুক উত্তরাঞ্চলের প্রাণ।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )