
সাত মাসেও প্রকাশ হয়নি ফলাফল, দুর্ভোগে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ফলাফল বিলম্ব, শিক্ষার্থী ভোগান্তি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন— বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। অষ্টম সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হয়েছে সাত মাস আগে, কিন্তু এখনো ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। ফলে চাকরির আবেদন, মাস্টার্সে ভর্তি ও স্কলারশিপের সুযোগ হারাচ্ছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগের শিক্ষক ও প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই এ দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে।
পরীক্ষার সাত মাস পেরোলেও ফলাফল অজানা
চলতি বছরের ১২ মার্চ শুরু হয়ে ১৬ এপ্রিল শেষ হয় বিভাগের অষ্টম সেমিস্টারের পরীক্ষা। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা ফলাফলের অপেক্ষায়। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেছে সাত মাস, এখনো কোনো নোটিশ বা ফল প্রকাশের ঘোষণা আসেনি।
একজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“আমরা প্রতিবারই শিক্ষকদের পেছনে ঘুরে বেড়াই। সময়মতো পরীক্ষা শেষ হয় না, ফলাফলও আসে না। মনে হয়, আমাদের ভাগ্যে দেরি লেখা আছে।”
আরেক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন,
“রেজাল্ট প্রকাশ কোনো অনুগ্রহ নয়, এটি আমাদের অধিকার। একদিন আগেও ফল পেলে হয়তো একটা চাকরির আবেদন করা যেত, কিন্তু আমরা সুযোগ হারাচ্ছি বারবার।”
চাকরি ও উচ্চশিক্ষায় অনিশ্চয়তা
শিক্ষার্থীরা জানান, ফলাফল না পাওয়ায় তারা মাস্টার্সে ভর্তি হতে পারছেন না, এমনকি চাকরির আবেদনেও যোগ্যতা প্রমাণে সমস্যা হচ্ছে।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থী বলেন,
“অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন এখন ভেঙে গেছে। জুনের পর যত চাকরির বিজ্ঞপ্তি এসেছে, আমরা কেবলই দেখেছি। এক শিক্ষক বলছেন ফাইল অন্যজনের কাছে, অন্যজন বলছেন কিছু জানি না।”
তিনি আরও বলেন,
“অন্য বিভাগের সহপাঠীরা এখন মাস্টার্স ফাইনালের প্রস্তুতি নিচ্ছে, আমরা এখনো অনার্স রেজাল্টের অপেক্ষায়।”
বিভাগের অভ্যন্তরীণ জটিলতা ও প্রশাসনিক গাফিলতি
বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি আব্দুল আলিম বাছির ফলাফল প্রকাশে আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু প্রয়োজনীয় সহায়তা না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন,
“যথাযথ সহায়তা পেলে এক সপ্তাহেই ফলাফল প্রকাশ সম্ভব। কেন বিলম্ব হচ্ছে, তা চেয়ারম্যান স্যার ভালো জানেন।”
তবে বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. হারুন অর রশীদ বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে আছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আশিকুর রহমান বলেন,
“পরীক্ষা কমিটির দুই শিক্ষকই শিক্ষা ছুটিতে থাকায় কিছুটা দেরি হচ্ছে। আমরা দ্রুত ফলাফল প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি।”
শিক্ষার্থীদের দাবিতে সরব সোশ্যাল মিডিয়া
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীরা #PublishAisResult এবং #JusticeForAisStudents হ্যাশট্যাগে পোস্ট দিচ্ছেন। তারা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছেন,
“একটি ফলাফল আটকে রাখার কারণে শত শত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হচ্ছে।”
একজন সাবেক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেছেন,
“বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বিভাগে বছরের পর বছর একই সমস্যা। সময়মতো পরীক্ষা হয় না, ফলাফল প্রকাশ হয় না। এখন সময় এসেছে জবাবদিহি নিশ্চিত করার।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“বিভাগীয় পর্যায়ে কিছু কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। অনেক সময় পরীক্ষক ও কমিটির সদস্যদের অনুপস্থিতি ফল প্রকাশে বিলম্ব ঘটায়। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ফল প্রকাশ কমিটি গঠনের চিন্তাভাবনা করছি।”
শিক্ষার্থীদের দাবি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন,
“আমরা ক্লাস শেষ করেছি, থিসিস জমা দিয়েছি, কিন্তু সার্টিফিকেট ছাড়াই ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে। দ্রুত ফলাফল প্রকাশ না হলে আমরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি দেব।”
তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ফলাফল প্রকাশের নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণা, দায়িত্বজ্ঞানহীন শিক্ষকদের জবাবদিহি ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার ডিজিটালাইজেশনের দাবি তুলেছেন।
শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন,
“ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব শুধু একাডেমিক ক্ষতি নয়, এটি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।”
সূত্র: বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, বরিশাল | শিক্ষার্থী অভিমত | বিভাগীয় সূত্র

