দেশে বেকার কয়েক কোটি, প্রকৃত চিত্র আসে না সংজ্ঞার কারণে

দেশে বেকার কয়েক কোটি, প্রকৃত চিত্র আসে না সংজ্ঞার কারণে

দেশে বেকারত্বের প্রকৃত সংখ্যা ও চিত্র সংজ্ঞাগত সীমাবদ্ধতার কারণে সঠিকভাবে প্রকাশ পাচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৪০ হাজার। এর আগের প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) এ সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত বেকার ও প্রচ্ছন্ন বেকারের সংখ্যা কয়েক কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।

সংজ্ঞার সীমাবদ্ধতা
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী, কেউ যদি গত সাত দিনে অন্তত এক ঘণ্টা বেতন বা মুনাফার বিনিময়ে কাজ করেন, তবে তিনি বেকার হিসেবে গণ্য হবেন না। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান সংস্থা একই সংজ্ঞা ব্যবহার করে। ফলে যারা টিউশনি, গৃহস্থালি ব্যবসা বা স্বল্প পরিসরের কাজ করেন, তারা “বেকার” হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন না।

উদাহরণস্বরূপ, রাজধানীর ভাটারার বাসিন্দা আবদুল মতিন দুই বছর ধরে চাকরি খুঁজছেন। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো কাজ পেলেও তা টেকসই নয়। অথচ সরকার তাকে বেকার হিসেবে গণ্য করছে না। একইভাবে রংপুরের মুক্তা টিউশনি করে সংসার চালালেও তার বেকারত্বের অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে না।

বেকারত্বের প্রকৃত চিত্র
বিবিএসের তথ্যমতে, দেশে মোট শ্রমশক্তি ৭ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজার কর্মে নিয়োজিত। বাকি ২৬ লাখ ৪০ হাজার বেকার। তবে শ্রমশক্তির বাইরে থাকা প্রায় ৫ কোটি মানুষ, যারা কাজ করতে আগ্রহী নন, তাদেরও হিসাবের বাইরে রাখা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. এস এম জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “আইএলওর সংজ্ঞা অনুযায়ী বেকারের সংখ্যা বাস্তব পরিস্থিতিকে প্রতিফলিত করে না। যারা অল্প আয় করে হলেও কাজ করছেন, তারা বেকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন না। সংজ্ঞা পরিবর্তন করে আয়ের মাত্রাকে বিবেচনায় নেওয়া হলে সংখ্যাটা অনেক বেশি হবে।”

তরুণদের বেকারত্ব ও শিক্ষা
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্নাতক শেষ করার তিন বছর পরও শিক্ষার্থীদের ২৮ শতাংশ কর্মহীন। লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) মতে, ১০০ জন স্নাতকের মধ্যে ৪৭ জন বেকার।

অর্থনৈতিক সংকট ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, দেশের অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ধ্বংস এবং কর্মসংস্থানের সংকট পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ছদ্মবেশী বেকারদের সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত না করলে বাস্তব চিত্র ধরা সম্ভব নয়।

বেকারত্বের সংজ্ঞায় “এক ঘণ্টা কাজ” নির্ধারণ বাদ দিয়ে আয়ের পরিমাণকে বিবেচনায় নেওয়া এবং আরও বাস্তবসম্মত মানদণ্ড প্রণয়ন করলে দেশের কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি সঠিকভাবে প্রতিফলিত হতে পারে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )