বিজ্ঞানীরা আমাকে এতটা মূল্যায়ন করবে ভাবিনি
শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ নেই, তবে রয়েছে নতুন নতুন ধান উদ্ভাবনের কৃতিত্ব। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরাও তাঁর কাজের মূল্যায়ন করেছেন। কৃষক-বিজ্ঞানী সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে মালয়েশিয়া সফর করেছেন স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া গ্রামের নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘‘আমার তিন বছর বয়সে মা মারা যান এবং পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাও মারা যান। তারপর থেকে আমার নানি আমাকে মানুষ করেছেন। বুদ্ধি হওয়ার পর নানির দেওয়া খেতেই ধান চাষ শুরু করি। এখনও সেই ধান নিয়েই আছি।’’ ছোটবেলা থেকে তাঁর চোখের সামনে প্রতিবছর খরায় ধান নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে আসছিল। তাই, ২০ বছর আগে ধান রক্ষা করার জন্য নিজেই গবেষণা শুরু করেন। দিনের পর দিন তাঁর মাটির ঘরটি হয়ে ওঠে গবেষণাগার। পরে তিনি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের সাবেক প্রধান হেলাল উদ্দিন স্যারের সহযোগিতা পান এবং হাতে-কলমে শেখেন। বর্তমানে তাঁর উদ্ভাবিত কৌলিক সারের সংখ্যা ২০০, যার মধ্যে পাঁচটি জাত হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য।
দেশে ধান উদ্ভাবনের জন্য সম্মানিত হলেও নূর মোহাম্মদ কখনোই বিদেশ থেকে আমন্ত্রণ পাবেন, এমনটি ভাবেননি। তবে এবার মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে কৃষক-বিজ্ঞানী সম্মেলনে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই সম্মেলন ৬ থেকে ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় এবং তাঁর সফর সহায়তায় এগিয়ে আসে বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজিনাস নলেজ (বারসিক)।
এটা ছিল নূর মোহাম্মদের প্রথম বিদেশ সফর এবং তিনি জানান, “বিমানবন্দরেও একটি নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। ইমিগ্রেশন অফিসাররা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে, আমি কৃষক-বিজ্ঞানী এবং বাংলাদেশ থেকে সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছি।” তবে পরে কোনো সমস্যা ছাড়াই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিমানযাত্রার প্রথম অভিজ্ঞতা এবং মালয়েশিয়ার মনোরম দৃশ্য দেখে তিনি মুগ্ধ হন। ৬ নভেম্বর সম্মেলন শুরু হলে, বারসিকের পক্ষ থেকে তাঁর ১১টি ছবি প্রদর্শন করা হয়। এরপর সম্মেলনে নূর মোহাম্মদ তাঁর কাজের কথা বলেন এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানান, “আমি একজন খাদ্যযোদ্ধা। করোনাকালে অধিক ফসল উৎপাদন করেছি এবং বিভিন্ন জাতের ধানের মিশ্রণ করে উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছি।” তাঁর উদ্ভাবিত ধানের জাতগুলোর গাছ মজবুত, রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম, এবং উচ্চ ফলনশীল।
সম্মেলনে ১৭ দেশের শতাধিক বিজ্ঞানী অংশগ্রহণ করেন এবং নূর মোহাম্মদকে বিস্ময়কর এক ব্যক্তি হিসেবে মূল্যায়ন করেন। তিনি জানান, “অনেকে আমার সাথে ছবি তোলার জন্য আগ্রহী ছিল এবং বিশেষভাবে নারীরা কোনো সংকোচ ছাড়াই আমার সাথে ছবি তুলেছেন।”
এছাড়াও, মালয়েশিয়ার সাবাহ রাজ্যের এক কিষানির কাছ থেকে একটি নতুন ধানের জাত সংগ্রহ করেছেন, যার জীবনকাল বেশি হলেও তিনি আশা করছেন গবেষণার মাধ্যমে তার জীবনকাল কমিয়ে আনতে সক্ষম হবেন।