ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গাজীউর রহমান মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেমের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। দুজনই পৃথক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছেন। এ ঘটনায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে।
মামলার পটভূমি
গত ১ নভেম্বর ইউনিয়ন বিএনপির দপ্তর সম্পাদক শাহালম বাদী হয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমানসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়।
১০ নভেম্বর রাত আনুমানিক ২টায় চা বিক্রেতা সেলিম মিয়াকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে শাহা আলমের মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে দেখানো হয় এবং আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়।
সেলিম মিয়ার স্ত্রীর অভিযোগ
১৩ নভেম্বর নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে সেলিম মিয়ার স্ত্রী খোদেঁজা বেগম দাবি করেন, তার স্বামী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন। তার অভিযোগ, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম তাদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। টাকা দিতে না পারায় কাসেম তার স্বামীকে মামলায় জড়িয়েছেন।
কাসেমের প্রতিবাদ
খোদেঁজার অভিযোগ অস্বীকার করে ১৪ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেন আবুল কাসেম। তিনি বলেন, সেলিম মিয়া ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য এবং মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। কাসেম আরও অভিযোগ করেন, বিএনপির কিছু নেতা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন এবং সেলিম মিয়ার স্ত্রীকে ব্যবহার করছেন।
কারণ দর্শানোর নোটিশ
১৪ নভেম্বর উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এতে সাংগঠনিক নিয়ম বহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ আনা হয় এবং তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। ১৬ নভেম্বর কাসেম নোটিশের জবাব দেন।
সভাপতির সংবাদ সম্মেলন
১৭ নভেম্বর বিকেলে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গাজীউর রহমান মোল্লা সংবাদ সম্মেলনে কাসেমের বহিষ্কার দাবি করেন। তিনি কাসেমকে “খারাপ প্রকৃতির” ব্যক্তি আখ্যা দিয়ে বলেন, ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জুয়ার আসর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং পরদিন রেজুলেশনের মাধ্যমে বয়কট করা হয়।
উপজেলা বিএনপির অবস্থান
বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগর জানান, সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সাধুরপাড়া ইউনিয়নের ঘটনার সঠিক তদন্ত করে দলীয় ফোরামে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাসেমের প্রতিক্রিয়া
আবুল কাসেম দাবি করেন, তিনি দলের নীতি মেনেই কাজ করে আসছেন এবং তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, “দলীয় সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেব, তবে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।” এই দ্বন্দ্ব মেটাতে দলীয় উচ্চপর্যায় থেকে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।