
হারাম উপার্জন: দুনিয়া-আখিরাত ধ্বংসের সতর্কবার্তা
হারাম উপার্জন, হালাল রিজিক, হারাম আয়, রিজিকে বরকত—এই চারটি বিষয়ের সঙ্গে একজন মুমিনের দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা গভীরভাবে জড়িত। অর্থ-সম্পদ আল্লাহর পক্ষ থেকে যেমন নিয়ামত, তেমনি বড় পরীক্ষা—এটি কারও জন্য কল্যাণের দরজা খুলে দেয়, আবার কারও জন্য অকল্যাণ ও গুনাহের পথ সহজ করে দেয়। তাই উপার্জনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা জরুরি।
এ বিষয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সাহাবিদের বারবার সতর্ক করেছেন। হাকিম ইবনে হিজাম (রা.)-কে তিনি বলেন, সম্পদ “সবুজ ও সুমিষ্ট”—যে ব্যক্তি তা খুশি মনে গ্রহণ করে তার জন্য বরকত হয়, আর যে লালসা নিয়ে গ্রহণ করে তার জন্য বরকত থাকে না; সে এমন মানুষের মতো যে খায় কিন্তু তৃপ্ত হয় না। তিনি আরও বলেন, দাতার হাত গ্রহীতার হাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। (বুখারি, হাদিস: ৬৪৪১)
১) ন্যায়নীতি বিসর্জন নয়
কোরআনে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করেছেন—ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি হলো পরীক্ষা, আর মহাপ্রতিদান আল্লাহর কাছেই। (তাগাবুন: ১৫)
লোভ যখন মানুষকে গ্রাস করে, তখন অনেকেই ন্যায়নীতি ও ইসলামের সীমা ভেঙে ফেলে। অথচ এই সাময়িক লাভ শেষ পর্যন্ত ধ্বংস ডেকে আনে। নবী (সা.) বলেছেন, প্রতিটি উম্মতের একটি ফিতনা আছে, আর আমার উম্মতের ফিতনা হলো ধন-সম্পদ। (তিরমিজি, ২৩৩৬)
২) প্রাপ্ত রিজিকে সন্তুষ্ট থাকা
আল্লাহ যে রিজিক নির্ধারণ করেছেন, তা মানুষ পাবেই। কিন্তু লোভ, অপচয় ও অহংকারে সেই নিয়ামতের বরকত কমে যায়। কোরআনে এসেছে—আল্লাহ যা দিয়েছেন তা দিয়ে আখিরাতের নিবাস খোঁজো, দুনিয়ার অংশ ভুলে যেয়ো না, অনুগ্রহ করো, আর জমিনে ফাসাদ করো না। (কাসাস: ৭৭)
হাদিসে বলা হয়েছে—যার ইসলাম গ্রহণের তাওফিক হয়েছে, প্রয়োজন পরিমাণ রিজিক পেয়েছে এবং আল্লাহ তাকে তাতে সন্তুষ্ট থাকার শক্তি দিয়েছেন—সেই ব্যক্তি সফল। (মুসলিম, ২৩১৬)
৩) হারাম উপার্জন ত্যাগ করা
হারাম পথে উপার্জিত সম্পদে বরকত থাকে না—এটি দুনিয়ায় অশান্তি বাড়ায়, আখিরাতে ভয়াবহ জবাবদিহি তৈরি করে। কোরআনে সুদ সম্পর্কে বলা হয়েছে—আল্লাহ সুদকে মিটিয়ে দেন এবং সদকাকে বাড়িয়ে দেন। (বাকারাহ: ২৭৬)
অর্থাৎ হালাল উপায়ে উপার্জনই প্রকৃত কল্যাণের পথ।
৪) পরকালকে ভয় করা
সামান্য লাভের লোভে মানুষ অনেক সময় পরকাল ভুলে যায়। অথচ কোরআনে অন্যায়ভাবে সম্পদ ভক্ষণ ও ঘুষের মাধ্যমে মানুষের অধিকার নষ্ট করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (বাকারাহ: ১৮৮)
শেষকথা—হালাল উপার্জন শুধু অর্থের বিষয় নয়; এটি ইমান, নৈতিকতা ও জবাবদিহির বিষয়। আল্লাহ তাআলা যেন সবাইকে সততা ও হালাল পথে রিজিক অর্জনের তাওফিক দেন—আমিন।

