
সৌন্দর্যে মোড়া স্নেক পাস: বন্ধ হবে কি দৃষ্টিনন্দন এই সড়ক?
বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত যুক্তরাজ্যের এ৫৭ স্নেক পাস সড়ক নিয়ে সম্প্রতি শুরু হয়েছে বিতর্ক। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সড়কটি যেমন প্রশংসিত, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে তা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুও বটে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, তুষারপাত, বরফ ও তীব্র বাতাসে সড়কটি প্রায়ই অচল হয়ে পড়ে। সরু ও আঁকাবাঁকা পথ এবং ভূমিধ্বসপ্রবণ এলাকাগুলো চালকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার যানবাহন চলাচল করে এই পথে, যার বেশিরভাগই ভারী যানবাহন।
স্নেক পাসের উচ্চভূমি অঞ্চলগুলোতে মুহূর্তেই আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে। হঠাৎ আসা কুয়াশা, প্রবল বাতাস বা বরফে রাস্তাটি হয়ে উঠতে পারে দুর্ঘটনাপ্রবণ। এছাড়াও, রাতের আঁধারে রাস্তা পার হওয়া হরিণ বা ভেড়ার মতো বন্যপ্রাণী চালকদের বিপদে ফেলতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকে সড়কটি যান চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার দাবি তুলেছেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, এর ফলে দুর্ঘটনা কমবে, প্রকৃতি রক্ষা পাবে এবং নিরাপদ হবে পরিবেশবান্ধব পর্যটন।
স্থানীয় বাসিন্দা এলিজাবেথ হারপার বলেন, “আমি বহু দুর্ঘটনার সাক্ষী। সড়কটি বন্ধ করলে মানুষের জীবন বাঁচবে।”
পর্যটক জন পিটার্স বলেন, “বন্যপ্রাণীর ওপর মানুষের আগ্রাসন কমাতে হবে।”
ব্যবসায়ী সারাহ থম্পসনের মতে, “যদি সড়কটি বন্ধ করা হয়, তবে পর্যটনের ধরন বদলাবে। পরিবেশবান্ধব পর্যটন বাড়বে, সাইক্লিস্ট ও পথচারীরা নিরাপদ বোধ করবে।”
অন্যদিকে, বিরোধীদের যুক্তি—এটি স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী এবং জরুরি সেবার জন্য অপরিহার্য রুট। তাদের মতে, সড়কটি বন্ধ হলে বিকল্প পথে বাড়বে চাপ, সময় ও খরচ।
পর্যটন উদ্যোক্তা জনাথন মাইলস বলেন, “এটি শুধু রাস্তা নয়, এটি ব্যবসা ও অর্থনীতির প্রবাহ।”
স্থানীয় প্যারামেডিক লিসা থম্পসন বলেন, “জরুরি মুহূর্তে এই পথই দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়।”
সড়কটি নির্মিত হয় ১৮১৮-১৮২১ সালে। কঠিন ভৌগোলিক ও আবহাওয়াগত চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই এর নকশা করা হয়। তবে সময়ের ব্যবধানে অবকাঠামোর দুর্বলতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়িয়েছে ঝুঁকি।
যদিও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সড়কটি পুরোপুরি বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই, তবে ভূমিধস ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ এবং রক্ষণাবেক্ষণ জোরদার করা হচ্ছে।
দীর্ঘদিনের বাসিন্দা র্যাচেল ইভান্স বলেন, “আমরা একদিকে পরিবেশ সংরক্ষণ, অন্যদিকে জীবিকার প্রয়োজনে ভারসাম্য খুঁজছি। হয়তো সীমিত যান চলাচল বা বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে ভবিষ্যতের পথ।”
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ