সচ্ছল জীবনের খোঁজে বেরিয়ে চিরতরে হারিয়ে গেছেন তারা
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার মেঘনা নদীর পাশের ছোট্ট গ্রাম মানিকপুরের সিদ্দিকুর রহমান সংসারের অভাব দূর করার আশায় মালয়েশিয়ার পথে পা বাড়ান ২০১৩ সালে। কৃষিকাজ ছেড়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়ে স্থানীয় দালাল ইব্রাহিম নকিবের হাতে তুলে দেন। কিন্তু বিমানবন্দরের বদলে তাঁকে টেকনাফের পথে তুলে দেওয়া হয় গরুর ট্রলারে। এরপর থেকেই সিদ্দিকুরের আর কোনো খোঁজ নেই। স্ত্রী বিলকিস আজও অপেক্ষায় আছেন স্বামীর ফেরার জন্য, কিন্তু পেরিয়ে গেছে ১১টি বছর। এই দুর্ভাগ্যের পথ বেছে নিয়েছেন আড়াইহাজারের অনেকেই; কেউ কেউ জীবিত ফিরে এলেও, অনেকেই সমুদ্রে বা পথে প্রাণ হারিয়েছেন।
এ ধরনের ঘটনার মূল নায়ক হিসেবে পরিচিত দালাল ইব্রাহিম নকিব। স্থানীয়দের মতে, নকিব আগে ছিলেন একজন সাধারণ তাঁত শ্রমিক, কিন্তু বর্তমানে তিনি দালালচক্রের প্রধান হয়ে ওঠেছেন। তাঁর দলটি পুরো আড়াইহাজার জুড়ে প্রায় ৬০ জন মাঠকর্মী নিয়ে গঠিত, যারা গ্রামের দরিদ্র মানুষদের প্রলোভনের জালে ফাঁসায়। আর এই অবৈধ কাজের মাধ্যমে নকিব এখন একাধিক বাড়ি, জমি ও বাণিজ্যিক ভবনের মালিক হয়েছেন।
আরও অনুসন্ধানে কালের কণ্ঠ ইব্রাহিম নকিব ছাড়াও এই চক্রের আরেক শক্তিশালী নেতা ঈসমাইল হোসেনের খোঁজ পায়। ২০০৫ সালে দেশে ফিরে ঈসমাইল একটি আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্র গড়ে তোলেন, যার মাধ্যমে মানুষকে পাচার করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত এই চক্রের টর্চার সেলগুলোতে এখনও অনেক বাংলাদেশি বন্দি থাকতে পারে বলে ধারণা।
বাংলাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, এবং মালয়েশিয়া উপকূল জুড়ে একটি বিপজ্জনক পাচার রুট তৈরি হয়েছে। এসব পথ ধরে হাজারো মানুষ সচ্ছল জীবনের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমান, কিন্তু বেশিরভাগই হয় কারাগারে বন্দি হন, নয়তো প্রাণ হারান।
এ পর্যন্ত অন্তত ৭০ জন ভুক্তভোগী ফিরে এসে তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, যা আড়াইহাজারে একটি ভয়ানক মানবপাচার পরিস্থিতির আভাস দেয়।