শেরপুরে বন্যায় ১২২ গ্রাম প্লাবিত, নারীসহ ৩ জনের মৃত্যু
ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে শেরপুরের তিনটি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। ঢলের পানি ভাটির দিকে নামতে থাকায় নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া নকলা উপজেলার নিম্নাঞ্চলেও নতুন করে বন্যার পানি ঢুকেছে। বর্তমানে চারটি উপজেলার অন্তত ২০টি ইউনিয়নের ১২২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এসব প্লাবিত এলাকায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নালিতাবাড়ীতে বাড়িঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পথে নারীসহ তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার (৫ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ঢলের তোড়ে দুটি উপজেলার এক পৌরসভাসহ ১৭টি ইউনিয়নের সবকটিই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ঢলের পানিতে ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে, ফসলি জমি, পুকুরের মাছ, গাছপালা ও গৃহপালিত পশু ভেসে গেছে, যা কৃষকদের জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী, দমকল বিভাগ এবং স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করে যাচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে এক হাজারের বেশি পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার মধ্যরাতে ঝিনাইগাতীর দীঘিরপাড় গ্রামে তিন মাসের এক শিশুকে ঘরের সিলিং থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘরের ভেতরে পানি উঠায় শিশুটিকে সিলিংয়ের ওপরে রেখে পরিবারটি অপেক্ষা করছিল। পরে স্বেচ্ছাসেবী দল র্যাপিড রেসপন্স বিডি শিশুটিকে সহ পরিবারের সবাইকে উদ্ধার করে।
বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সব স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধারকাজ সমন্বয়ের জন্য পৃথক টিম গঠন করা হয়েছে। ত্রাণ হিসেবে বন্যাকবলিতদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাকিবুজ্জামান খান জানিয়েছেন, নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও চেল্লাখালী নদী দুটির পানি এখনও বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢলে দুই পাড়ের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন ঠেকানোর কাজ চলছে।