যেভাবে ‘জঙ্গি’ হলেন মাওলানা মোজাফফর

যেভাবে ‘জঙ্গি’ হলেন মাওলানা মোজাফফর

২০১৭ সালের ২২ অক্টোবরের সন্ধ্যায় যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের পুরনো ছাত্রাবাস মসজিদে মাগরিবের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে মাওলানা মোজাফফর হোসেন পুলিশি অভিযানে গ্রেপ্তার হন। ওই সময় তার বাড়ি থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের দাবি করা হয়। সাত বছর পর জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি পুরো ঘটনাকে “জঙ্গিনাটক” আখ্যা দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, কিভাবে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়েছিল।

মোজাফফরের জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
মাওলানা মোজাফফর বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। অভাবের কারণে ১৯৯২ সালে তিনি যশোর শহরের দড়াটানা জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা শুরু করেন। সেখান থেকে মাওলানা ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৯৬ সালে মাত্র ৭০০ টাকা বেতনে ইমামতির চাকরি নেন। পরে বেতন বেড়ে ১৫ হাজার টাকা হয়।

পরিবারের সঙ্গে সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন তিনি। বাড়িতে একটি গাভি পালন করতেন, স্ত্রী সেলাইয়ের কাজ করতেন। কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হননি বলে দাবি করেছেন তিনি।

গ্রেপ্তারের সময় যা ঘটেছিল
মোজাফফর জানান, মসজিদ থেকে বেরিয়ে আরবি পড়ানোর উদ্দেশ্যে রাস্তার ওপারে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে গেট থেকেই ধরে নিয়ে যায়। যদিও পরে পুলিশ দাবি করে, তার বাড়ি থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় কাউন্সিলর মুস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্যও মিলে যায় মোজাফফরের দাবির সঙ্গে। তারা নিশ্চিত করেছেন, তাকে ছাত্রাবাসের গেট থেকেই তুলে নেওয়া হয়েছিল।

‘অস্ত্র উদ্ধারের’ নাটক
মোজাফফরের বাড়িতে তল্লাশির সময় পানির লাইনের অ্যালবোকে পুলিশ গ্রেনেড বলে চালায়। পশু কোরবানির জন্য থাকা ছুরি “অস্ত্র” হিসেবে দেখানো হয়। এমনকি কিছু তরল পদার্থ এবং আগ্নেয়াস্ত্রও বাইরে থেকে এনে মোজাফফরের বাড়িতে উদ্ধার দেখানো হয়।

এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক এস এম ফরহাদও জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি নতুন অ্যালবোসহ এমন সরঞ্জাম দেখেছিলেন, যা জঙ্গি কার্যক্রমে ব্যবহারের উপকরণ বলে বিশ্বাস করা কঠিন।

জামিনে মুক্তি ও সাত বছরের বিভীষিকা
গত ১৮ অক্টোবর জামিনে মুক্ত হয়ে মাওলানা মোজাফফর সাত বছরের এই দুর্বিষহ সময়ের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি দাবি করেছেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগের শিকার হয়েছেন এবং তার জীবনের মানমর্যাদা ধ্বংস করা হয়েছে।

প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ
এ ঘটনা শুধু একজন ব্যক্তির ওপরই নয়, পুরো বিচারব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীলতার ওপর প্রশ্ন তুলেছে। জঙ্গিবাদের অভিযোগ তুলে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করার এই ধরণের কার্যক্রম কেবল ব্যক্তির ক্ষতি করে না, বরং সমাজে ভয় এবং অবিশ্বাসের জন্ম দেয়।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )