যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক বৃদ্ধির ধাক্কা, স্থগিত হচ্ছে পোশাক রপ্তানির অর্ডার

যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক বৃদ্ধির ধাক্কা, স্থগিত হচ্ছে পোশাক রপ্তানির অর্ডার

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম প্রধান রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কনীতির ফলে দেশের পোশাক খাতে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা। যুক্তরাষ্ট্রে এখন তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে ব্র্যান্ড ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে অর্ডার ও চুক্তি মূল্য নিয়ে ভাবতে বাধ্য হয়েছে।

এতে দেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা আগেই নেওয়া অর্ডারের কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ পেয়েছে। কেউ কেউ উৎপাদন সম্পন্ন করেও শিপমেন্ট নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন। আগে যেখানে সর্বোচ্চ শুল্ক ছিল ১৮ শতাংশ, সেখানে এখন ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত দিতে হবে, যা রপ্তানিকারকদের জন্য বড় ধরনের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাড়তি শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে পোশাকের দাম বাড়বে, এতে কমবে চাহিদাও। সেই সঙ্গে অনেকে ভয়ে অর্ডার স্থগিত করছেন। আগেই চুক্তিবদ্ধ হওয়া দামে পণ্য সরবরাহ করতে গেলে নতুন শুল্ক খরচ কে বহন করবে—এ নিয়ে চলছে উদ্বেগ ও আলোচনার ঝড়।

চট্টগ্রামভিত্তিক ওয়েল গ্রুপের পরিচালক ও বিজিএমইএর সাবেক নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, মার্কিন ক্রেতারা এখন রপ্তানিকারকদের থেকে ডিসকাউন্ট দাবি করছেন, অথবা শিপমেন্ট আপাতত বন্ধ রাখতে বলছেন। এতে অনেক কারখানায় আর্থিক সংকট দেখা দিতে পারে।

অনেকে বলছেন, মার্কিন ক্রেতারা এখন পুরোনো দামে অর্ডার সম্পন্ন করতে চাচ্ছেন, অথচ নতুন শুল্ক অনুযায়ী দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্রতি মাসে বাংলাদেশ গড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। চার মাসে যা গিয়ে দাঁড়ায় ১৬ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত। এই অর্ডারগুলো এখন হুমকির মুখে।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পাঠানোর পর নতুন শুল্ক হার কার্যকর হলে প্রাইস ট্যাগ, ডকুমেন্ট, মূল্য নির্ধারণ—সব কিছুতেই জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ শিপিংয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৩৫ দিন।

বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক এবং বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই অবস্থায় ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো টিকে থাকতে হিমশিম খাবে।

শুল্ক জটিলতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি স্থবির হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা শুরু করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS Wordpress (0) Disqus ( )