
যুক্তরাষ্ট্রে অনাগত সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত ভারতীয় অভিবাসীরা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের নির্বাহী আদেশের পর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ভারতীয় অভিবাসীরা তাদের অনাগত সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী দ্বিতীয় বৃহত্তম অভিবাসী গোষ্ঠী হলো ভারতীয়রা, যাদের মধ্যে ৫০ লাখেরও বেশি নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসায় (অ-অভিবাসী ভিসা) রয়েছেন। ট্রাম্পের আদেশ কার্যকর হলে ভবিষ্যতে এই দেশে জন্মগ্রহণকারী তাদের সন্তানরা নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ হারাবে।
এমনই এক দম্পতি হলেন নেহা সতপুতে এবং অক্ষয় পিসা। ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার এই দম্পতি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এইচ-১বি ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রথম সন্তানের জন্মের কথা। তারা আশা করছিলেন যে তাদের সন্তান মার্কিন নাগরিক হিসেবে জন্মগ্রহণ করবে। কিন্তু ট্রাম্পের আদেশ তাদের স্বপ্নকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
আগে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেক শিশু নাগরিকত্ব পেত, বাবা-মায়ের অভিবাসন স্ট্যাটাসের উপর নির্ভর করে না। তবে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিবর্তন এই বিধানকে বদলে দিতে চায়। সিয়াটল আদালত প্রাথমিকভাবে দুই সপ্তাহের জন্য এই আদেশের স্থগিতাদেশ দেয়। পরে মেরিল্যান্ডের এক ফেডারেল বিচারক এই স্থগিতাদেশ বাড়িয়ে দেন। ফলে আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত এই বিধি কার্যকর হবে না।
অক্ষয় পিসা বলেন, “এই বিধি যদি কার্যকর হয়, তাহলে আমরা জানি না আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে। এটা সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অনেক ভারতীয় পরিবার এখন নির্ধারিত সময়ের আগেই সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের বিষয়ে চিন্তা করছেন। নিউ ইয়র্কভিত্তিক ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি সাইরাস মেহতা বলেন, “এই বিষয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মার্কিন আইনে এই দেশে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিকে অ-অভিবাসী মর্যাদা দেওয়ার কোনো বিধান নেই।”
ডা. সতীশ কাঠুলা, মার্কিন অ্যাসোসিয়েশন অফ ফিজিশিয়ানস অফ ইন্ডিয়ান অরিজিনের সভাপতি, বলেন, “চিকিৎসা আইন কঠোর হওয়ায় শুধু নাগরিকত্বের জন্য সি-সেকশন করার বিরুদ্ধে আমি দৃঢ় পরামর্শ দিই। আমাদের চিকিৎসকরা নীতিবান, চিকিৎসাগতভাবে প্রয়োজন না হলে তারা এটি করবেন না।”
মার্কিন নাগরিকত্ব বিশেষত এইচ-১বি ভিসাধারীদের কাছে অত্যন্ত লোভনীয়। অভিবাসন বিশ্লেষক স্নেহা পুরী বলেন, “জন্মগত নাগরিকত্বের বিরুদ্ধে বিধি ভারতীয়দের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।”
অনলাইন গ্রুপগুলোতে দক্ষিণ এশীয় হবু বাবা-মায়েরা তাদের উদ্বেগ শেয়ার করছেন। গ্রিন কার্ড পাওয়া সহজ নয়, বিশেষত ভারতীয়দের জন্য। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, কোনো একটি দেশের জন্য গ্রিন কার্ডের সংখ্যা মোটের ৭% এর বেশি হতে পারে না। এর ফলে ভারতীয়দের গ্রিন কার্ডের জন্য অনেক বছর অপেক্ষা করতে হয়।
কেটো ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে গ্রিন কার্ডের জন্য অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিদের ৬২% ভারতীয়। ডেভিড বিয়ারওয়ার্ন, কেটোর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের পরিচালক, বলেন, “নতুন ভারতীয় আবেদনকারীদের আজীবন অপেক্ষা করতে হবে। গ্রিন কার্ড পাওয়ার আগেই চার লক্ষ আবেদনকারীর মৃত্যু হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।”
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে ওয়ার্ক ভিসা এবং স্টুডেন্ট ভিসায় আসা ভারতীয়দের মধ্যে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। এরা ইতিমধ্যেই তাদের আইনি অনিশ্চয়তা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তাদের কাছে একমাত্র ‘গ্যারান্টি’ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে জন্মানো তাদের সন্তানদের নাগরিকত্ব। কিন্তু এখন সেই বিষয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।