মেয়েকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্নে ঢাকায় আসা বাবা-মায়ের জীবনে এখন শুধুই শূন্যতা

মেয়েকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্নে ঢাকায় আসা বাবা-মায়ের জীবনে এখন শুধুই শূন্যতা

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার তালখুর গ্রামের আশরাফ আলীর মেয়ে রিতা আক্তার স্বপ্ন দেখেছিলেন চিকিৎসক হয়ে দরিদ্র মানুষের সেবা করার। সেই স্বপ্নপূরণের জন্য বাবা-মা রিকশা চালানো এবং বাসাবাড়িতে কাজ করার কঠিন পথ বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন চিরতরে ভেঙে যায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে, যখন পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ হারান রিতা।

ঢাকার মিরপুরের দুয়ারীপাড়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী রিতা এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্যে জয়পুরহাট থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছিলেন। বাবার রিকশা চালানো আর মায়ের বাসাবাড়িতে কাজ করা ছিল তার স্বপ্নপূরণের পাথেয়। কিন্তু সব কষ্ট বৃথা হয়ে যায় ছাত্র আন্দোলনের দিনে, যখন পুলিশের গুলিতে রিতার জীবন অকালে থেমে যায়।

ঘটনাটি ঘটে ৫ আগস্ট, একটি স্বাভাবিক সকালের শুরুতে। বান্ধবীর ফোন পেয়ে রিতা ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিতে বের হন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর-২ এলাকায় পুলিশের গুলিতে মাথায় আঘাত পেয়ে নিহত হন তিনি। সারা দিন মেয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত আশ্রাফ আলী ও তার স্ত্রী রেহানা বিবি উদ্বিগ্ন হয়ে খুঁজতে থাকেন। অবশেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে তারা মেয়ের নিথর দেহ খুঁজে পান। তাদের সব স্বপ্ন এক মুহূর্তেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।

প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও রিতার বাবা-মায়ের কান্না থামেনি। গ্রামের ছোট্ট বাড়ির এক কোণে রিতার বই ও পুরস্কারগুলো গর্বের স্মৃতি হিসেবে সাজানো রয়েছে, কিন্তু রিতা আর কোনো দিনই তা ছুঁয়ে দেখতে পারবে না। মা রেহানা বিবি বলেন, ‘মেয়ের স্বপ্নপূরণের জন্য আমি ঢাকায় গিয়ে বাসাবাড়িতে কাজ করেছি, কিন্তু আমার মেয়েকে কেন গুলি করে মেরে ফেলা হলো, তা বুঝতে পারি না। আমাদের অপরাধ কী ছিল?’

বাবা আশরাফ আলী বলেন, ‘মেয়ের জন্য গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় গিয়েছিলাম। এখন সে নেই, ঢাকায় থাকার আর কোনো দরকার নেই। আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।’ তার কণ্ঠে ফুটে ওঠে বেদনা ও শোকের গভীরতা।

 

4o

TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )