মির্জাপুরে পরকীয়া প্রেমিককে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ২

মির্জাপুরে পরকীয়া প্রেমিককে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ২

54 / 100 SEO Score

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মির্জাপুরে পরকীয়া প্রেমিককে পিটিয়ে হত্যা হওয়া এক নির্মম ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। চোর অপবাদ দিয়ে এক ব্যবসায়ীর দোকানে ডেকে নিয়ে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত স্বামী রাশেদুল ইসলাম ও তার চাচাতো ভাই ইয়ামিন ইসলামসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মির্জাপুর থানা পুলিশ।

পরকীয়া অভিযোগ, তারপর ফাঁদে ডেকে নিয়ে মারধর

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের গ্রামনাহালি গ্রামের রমজান আলীর ছেলে রাশেদুল ইসলাম প্রবাসে থাকাকালে তার স্ত্রী নিশি বেগমের সঙ্গে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাজিমারা গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে হাসমত উল্লাহ হাসু (৩০)-এর পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিহত হাসু টাঙ্গাইল সদরের আইএফআইসি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, রাশেদুল দেশে ফেরার পরও হাসমত উল্লাহ হাসু বিভিন্ন কৌশলে নিশি বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাশেদুল ও তার স্ত্রী পরিকল্পনা করে হাসুকে দেখা করার জন্য ডেকে আনার ফাঁদ পেতে রাখেন।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে নিশি বেগমের সঙ্গে দেখা করতে গ্রামনাহালি গ্রামে যান হাসমত উল্লাহ হাসু। এ সময় স্বামী রাশেদুল ইসলাম ও চাচাতো ভাই ইয়ামিন ইসলাম তাকে ধরে ফেলে এবং প্রথমে চোর সন্দেহে আটক করার নাটক সাজায়।

দোকানে নিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম, হাসপাতালে মৃত্যু

স্থানীয়দের ভাষ্য, হাসুকে আটক করার পর রাশেদুল ইসলাম ও ইয়ামিন ইসলাম তাকে দোকানের ভেতরে নিয়ে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও লাঠি–সোটা দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসুকে উদ্ধার করে প্রথমে জামুর্কীস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমুদিনী হাসপাতালে পাঠানো হলে রাত প্রায় ২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহত হাসমত উল্লাহ হাসু জামালপুরের বকশীগঞ্জের সাজিমারা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও চাকরিসূত্রে টাঙ্গাইলে থাকতেন।

গ্রেপ্তার ২, মামলায় স্বামী-স্ত্রীসহ একাধিক আসামি

ঘটনার পরপরই মির্জাপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মূল অভিযুক্ত স্বামী রাশেদুল ইসলাম (৩৬) ও তার চাচাতো ভাই ইয়ামিন ইসলামকে (৩০) গ্রেপ্তার করে। দুজনই মহেড়া ইউনিয়নের গ্রামনাহালি গ্রামের বাসিন্দা। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) তাদের টাঙ্গাইল আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

নিহত হাসুর ভাই রহমত উল্লাহ বাদী হয়ে রাশেদুল ইসলাম, তার স্ত্রী নিশি বেগমসহ নাম উল্লেখ করে মোট ছয়জন এবং অজ্ঞাতনামা ৪–৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, পূর্বপরিকল্পিতভাবে চোর অপবাদ দিয়ে পরকীয়া প্রেমিককে ফাঁদে ফেলে হত্যা করা হয়েছে।

‘ব্যক্তিগত সম্পর্কের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড’

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, মির্জাপুরে পরকীয়া প্রেমিককে পিটিয়ে হত্যা করার এ ঘটনাটি পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া দুইজনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

এলাকাবাসীর মতে, ঘটনা শুধু একটি পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের দ্বন্দ্ব নয়; পরিকল্পিতভাবে চোর অপবাদ দিয়ে পরকীয়া সন্দেহের জেরে একজন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা সভ্য সমাজের জন্য এক ধরনের অশনিসংকেত। তারা দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus ( )