
মিরসরাইয়ে বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তনে ১১ নেতার চিঠি
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে মিরসরাইয়ে বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তন নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপির এই আসনের প্রার্থী বদলের দাবিতে সরাসরি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত চিঠি দিয়েছেন উত্তর জেলা, মিরসরাই উপজেলা ও দুই পৌরসভার মোট ১১ জন নেতা।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) এই যৌথ চিঠি পাঠান তারা। স্থানীয় সূত্র ও সংশ্লিষ্ট নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, যাঁরা চিঠিতে সই করেছেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন নিজেও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হতে চান। এতে করে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে মিরসরাইয়ে বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তন দাবিটি আরও স্পষ্টভাবে সামনে এসেছে।
কার বিরুদ্ধে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি?
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান। তবে মিরসরাইয়ে বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তন বিষয়ে চিঠি দেওয়া নেতারা দাবি করছেন, নুরুল আমিনকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই নেতাকর্মীদের একটি অংশের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
কারা সই করেছেন এই চিঠিতে?
তারেক রহমানের কাছে পাঠানো চিঠিটিতে স্বাক্ষর করেছেন—
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রফেসর এমডিএম কামাল উদ্দিন চৌধুরী
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন
মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল চৌধুরী
মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী
উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলিউল কবির ইকবাল
মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী
উপজেলা বিএনপির সদস্য জিয়াদ আমিন খান
বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মাঈন উদ্দিন লিটন
বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জসীম উদ্দীন কমিশনার
মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক জামশেদ আলম
মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুল হাসান লিটন
এই ১১ জনের স্বাক্ষরে পাঠানো চিঠিতেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে মিরসরাইয়ে বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তন দাবি আনুষ্ঠানিক রূপ পায়।
কেন প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি?
চিঠিতে স্বাক্ষর করা নেতাদের একজন, মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও মনোনয়নপ্রত্যাশী শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন,
‘মিরসরাই উপজেলায় একের পর এক বিতর্কিত কার্যক্রমের জন্য নুরুল আমিন বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তাঁকে হঠাৎ করে দলে ফিরিয়ে এনে প্রার্থী করার বিষয়টি উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ মেনে নিতে পারছেন না।’
তিনি আরও যুক্ত করেন, এই প্রার্থীকে নিয়ে মাঠে কাজ করা কঠিন হয়ে যাবে এবং “মিরসরাইয়ে বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তন না হলে” আসনটিতে বিএনপির বিজয় অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাঁর দাবি, দলের দুঃসময়ে যারা মাঠে থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের মধ্য থেকে কাউকে মনোনয়ন দিলে কর্মীরা বেশি উৎসাহিত হবেন।
প্রার্থীপক্ষের ব্যাখ্যা
নুরুল আমিন চেয়ারম্যান বর্তমানে ওমরা পালনে সৌদি আরবে থাকায় সরাসরি তাঁর মন্তব্য জানা যায়নি। তবে তাঁর অনুসারীরা এই মিরসরাইয়ে বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তন দাবিকে ‘অপততপরতা’ হিসেবে দেখছেন।
মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন বলেন,
‘মিরসরাইয়ের জননন্দিত নেতা নুরুল আমিন চেয়ারম্যানকে প্রার্থী করার আগেও এমন চিঠি পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রে। তিনি দলের দুর্দিনে মাঠে ছিলেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, একাধিকবার কারাবরণ করেছেন। এত যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনার পরই তাকে প্রার্থী করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন,
‘মিরসরাইয়ে বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তন নিয়ে যারা অপতৎপরতা করছেন, তাদের এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই প্রার্থীকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা উচিত।’
মাঠের রাজনৈতিক সমীকরণ
স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাংশ মনে করছেন, মিরসরাইয়ে বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তন হলে কর্মীদের মাঝে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হতে পারে। তবে আরেক পক্ষ বলছে, বারবার প্রার্থী বদলের আলোচনায় মাঠের সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল হতে পারে, বিভাজন আরও গভীর হতে পারে এবং বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির কাছে এটি নেতিবাচক বার্তা দেবে।
এদিকে সাধারণ নেতাকর্মীদের একটি অংশ অপেক্ষায় আছেন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের। তারেক রহমানের কাছে পাঠানো চিঠির প্রেক্ষিতে দল নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় কি না, সে দিকেই এখন তাকিয়ে মিরসরাই বিএনপি।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে মিরসরাইয়ে বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তন ইস্যুটি এখন শুধু সংগঠনের ভেতরের আলোচনায় নয়, স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনেও ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়ে উঠেছে।

