পাগলা মসজিদের দান বাক্সে এবার ২৮ বস্তা টাকা, ছাড়িয়েছে আগের সব রেকর্ড

পাগলা মসজিদের দান বাক্সে এবার ২৮ বস্তা টাকা, ছাড়িয়েছে আগের সব রেকর্ড

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান বাক্স খুলে আবারও সৃষ্টি হয়েছে চমকপ্রদ রেকর্ড। প্রায় চার মাস ১১ দিন পর শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে খোলা হয় মসজিদের ১১টি সিন্দুক। আর সেখান থেকেই উঠে আসে ২৮ বস্তা ভর্তি টাকা।

সকাল সাড়ে ৭টায় জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী এবং প্রশাসনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দান বাক্স খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়। দানকৃত অর্থ মসজিদের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গণনার কাজ চলছে।

এর আগে গত ৩০ নভেম্বর দান বাক্স খোলা হলে সর্বশেষ পাওয়া গিয়েছিল ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা। তখনো সৃষ্টি হয়েছিল আগের রেকর্ড ছাড়ানোর ইতিহাস। তবে এবার টাকার পরিমাণ ছাড়িয়ে যেতে পারে পূর্বের সব পরিমাণকে।

দ্বিতীয় তলায় বসে দুই মাদরাসার প্রায় আড়াইশ শিক্ষার্থী, ব্যাংকের ৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় চলছে টাকা গোনার কাজ। সবমিলিয়ে প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন প্রায় সাড়ে চার শতাধিক জনবল।

রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম জানান, দেশি টাকার পাশাপাশি এবারো পাওয়া গেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা, সোনা-রুপার অলংকার। এগুলোর হিসাব শেষ হতে সন্ধ্যা বা রাত পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

২০২৩ সালে চারবার দান বাক্স খোলা হলে মোট ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকার দান পাওয়া গিয়েছিল। চলতি বছর তিনবারের গণনায় আগেই উঠেছে প্রায় ১৪ কোটি টাকার বেশি। এবার সেই রেকর্ডও ভাঙতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

মসজিদ কমিটি জানায়, সাধারণত তিন মাস পরপর দান বাক্স খোলা হয়, তবে এবার সময় হয়েছে চার মাসেরও বেশি। এই সময়সীমা বাড়ার ফলে দানের পরিমাণও অতীতের তুলনায় বেশি হয়েছে।

স্থানীয়দের বিশ্বাস, এখানে দান করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়—এই আধ্যাত্মিক আকর্ষণে মুসলমান ছাড়াও অন্য ধর্মাবলম্বীরাও পাগলা মসজিদে দান করেন। দান হিসেবে আসে নগদ অর্থ, সোনা-রুপার অলংকার, বিদেশি মুদ্রা, গবাদি পশু, মুরগি, ফলমূল ও ধর্মীয় বই।

প্রতিবারের মতো এবারো পাওয়া গেছে দানের চিঠিপত্র—যেখানে লেখা থাকে জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির গল্প, স্বপ্ন পূরণের আকুতি, আরোগ্যের প্রার্থনা কিংবা চাকরি বা পরীক্ষার সাফল্যের জন্য আবেদন।

জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, দানের টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয় এবং সেই অর্থের লভ্যাংশ দিয়ে জটিল রোগে আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়। বর্তমানে ব্যাংকে জমা রয়েছে প্রায় ৮০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

এই অর্থ দিয়ে মসজিদ উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেওয়া হয়েছে বড় পরিসরের উদ্যোগ। নির্মিত হবে একটি ছয়তলাবিশিষ্ট আধুনিক ইসলামিক কমপ্লেক্স, যেখানে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন ৫০ হাজার মুসল্লি। এর মধ্যে পাঁচ হাজার নারীর জন্য থাকবে আলাদা নামাজের ব্যবস্থা। কমপ্লেক্সে থাকবে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ও অন্যান্য ধর্মীয় কার্যক্রমের সুযোগ-সুবিধা।

মসজিদ কমিটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে। ডিজাইন ও নকশা চূড়ান্ত হলে দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরু হবে বলে জানান মসজিদের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS Wordpress (0) Disqus ( )