নবীজির সঙ্গে বেয়াদবির করুণ পরিণতি
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মক্কায় ইসলাম প্রচার শুরু করেন, তখন পারস্য সাম্রাজ্য ছিল বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র। পারস্যবাসী মূলত জরথুস্ট্র ধর্মের অনুসারী ছিল। ইতিহাসবিদদের মতে, জরথুস্ট্রের শিক্ষা একেশ্বরবাদী হলেও পরে তা বিকৃত হয়ে অগ্নি উপাসনায় রূপ নেয়।
রাসুল (সা.) এর সময় পারস্য সাম্রাজ্যের সম্রাট ছিলেন কিসরা পারভেজ। তিনি ছিলেন অত্যন্ত অহংকারী এবং ক্ষমতাবান। নবীজি (সা.) যখন ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রাজাকে চিঠি পাঠান, তখন পারস্য সম্রাটকেও একটি চিঠি পাঠানো হয়।
নবীজির চিঠি এবং সম্রাটের প্রতিক্রিয়া:
চিঠিতে নবীজি (সা.) কিসরা পারভেজকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান এবং বলেন,
“আপনি ইসলাম গ্রহণ করলে শান্তি ও সম্মান আপনার জন্য নির্ধারিত। যদি দাওয়াত কবুল না করেন, তাহলে আপনার প্রজাদের গুনাহ আপনার ওপর বর্তাবে।”
চিঠি পড়ে কিসরা পারভেজ ক্রোধে ফেটে পড়েন। তিনি চিঠিটি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলেন এবং অবজ্ঞাসূচকভাবে বলেন,
“আমি পারস্যের সম্রাট। আরবের মুহাম্মদ আমাকে ঈমান আনার দাওয়াত দেয়!”
নবীজি (সা.) যখন এই খবর শুনলেন, তখন তিনি বললেন,
“আমার চিঠির মতোই তার সাম্রাজ্য ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।”
কিসরার করুণ পরিণতি:
কিসরা পারভেজ নবীজির প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সিরিয়ার গভর্নর বাজানকে নির্দেশ দেন মুহাম্মদ (সা.)-কে গ্রেপ্তার করার। গভর্নর দুজন দূত পাঠান নবীজিকে আনতে।
তাদের সঙ্গে সাক্ষাতে নবীজি (সা.) বলেন,
“তোমাদের সম্রাট গতরাতে তার নিজের ছেলের হাতে নিহত হয়েছে। বাজানকে বলো, সে যেন ইসলাম কবুল করে।”
পরবর্তীতে জানা যায়, সত্যিই কিসরা পারভেজ ওই রাতে তার ছেলে শেরওয়াইহির হাতে নিহত হন।
চরম শাস্তি:
ইতিহাসে বলা হয়েছে, কিসরা পারভেজের মৃত্যুর পর তার দেহ কেটে টুকরো টুকরো করা হয়, যেভাবে তিনি নবীজির চিঠি টুকরো করেছিলেন।
এই ঘটনা প্রমাণ করে, অহংকার ও নবীজির সঙ্গে বেয়াদবি করার চরম পরিণতি কী হতে পারে।
উৎস: আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, শাওয়াহেদুন নবুওয়াত