দেশে নন-ইউরিয়া সারের ২৮ শতাংশ মানহীন, বিপর্যস্ত কৃষি খাত

দেশে নন-ইউরিয়া সারের ২৮ শতাংশ মানহীন, বিপর্যস্ত কৃষি খাত

বাংলাদেশের কৃষি খাতে নন-ইউরিয়া সারের মানহীনতার হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, দেশে ব্যবহৃত নন-ইউরিয়া সারের প্রায় ২৮ শতাংশ মানহীন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানহীন সার হিসেবে শনাক্ত হয়েছে এনপিকেএস, এমওপি এবং জিংক সালফেট মনোহাইড্রেট।

এসআরডিআই ১৩ ধরনের সারের ২৭৮টি নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছে যে ১৮১টি নমুনা মানসম্পন্ন হলেও ৭৭টি নমুনার মান সঠিক নয়। এনপিকেএস এবং এমওপি সারের শতভাগই মানহীন। এছাড়া জিংক সালফেট মনোহাইড্রেটের ৫৩ শতাংশ এবং অর্গানিক ফার্টিলাইজারের ২৪ শতাংশ মানহীন পাওয়া গেছে। তবে ডিএপি, বোরন এবং এসওপি সার শতভাগ মানসম্পন্ন।

কৃষি খাতে এর প্রভাব
গাজীপুর, সাতক্ষীরা, এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে মানহীন সারের কারখানা বেড়ে গেছে। রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে এসব কারখানা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সাতক্ষীরার ধুলিহর এলাকায় ১০ ডিসেম্বর পরিচালিত এক অভিযানে মানহীন সারের কারখানায় প্রবেশের চেষ্টায় ম্যাজিস্ট্রেটকে বাধা দেওয়া হয়। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অপমান করে অভিযানে বাধা দেন।

এমন মানহীন সারের ব্যবহার কৃষিপণ্যের উৎপাদন হ্রাস করছে এবং মাটি, পানি ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। কৃষকরা এ ধরনের সার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

সারের মানহীনতার কারণ
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) মাধ্যমে দেশে সার সরবরাহ করা হয়। তবে সরকারি গুদামের ধারণক্ষমতা সীমিত হওয়ায় অনেক সার খোলা আকাশের নিচে রাখতে হয়। এতে সারের গুণগত মান নষ্ট হয়।

এ ছাড়া আমদানিকৃত সারের সংরক্ষণ ও বিপণনে ত্রুটি এবং স্থানীয়ভাবে নিম্নমানের কাঁচামাল ব্যবহারে উৎপাদিত সার মানহীন হয়ে পড়ছে।

সমাধানের উদ্যোগ
কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে মানহীন সারের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয় জানায়, সার উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে তদারকি জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকদের সচেতন করতে মাঠ পর্যায়ে প্রচারণা বাড়ানো হয়েছে।

কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেন, “কৃষকদের জন্য সঠিক মানের সার নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আমরা জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছি। মানহীন সার উৎপাদন কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।”

উপসংহার:
ভালো মানের সার সঠিক মাত্রায় ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব এবং সরকারী ভর্তুকির অপচয় রোধ করা যাবে। তবে এ জন্য সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন, কঠোর তদারকি এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )