দেশে দেশে রমজান সংস্কৃতি

দেশে দেশে রমজান সংস্কৃতি

রমজান এক গভীর আধ্যাত্মিক মাস, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও রীতিনীতির মাধ্যমে উদযাপিত হয়। এই পবিত্র মাসকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে গড়ে উঠেছে অনন্য ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। আসুন, আমরা দেখি বিভিন্ন অঞ্চলে রমজান উদযাপনের কিছু বিশেষ দিক।

🔹 মধ্যপ্রাচ্যের রমজান ঐতিহ্য
✅ মিসর : ‘ফানুস’ উৎসব
মিসরে রমজানের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ‘ফানুস’ উৎসব। এটি শত শত বছর ধরে চলে আসছে, যেখানে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও রাস্তা রঙিন ফানুস দিয়ে সাজানো হয়। বিশেষ করে কায়রোতে রমজানের শুরুর দিকে ফানুসের মেলা বসে।

✅ সৌদি আরব : মসজিদভিত্তিক ইফতার ও ঐতিহ্যবাহী খাবার
মক্কা ও মদিনার পবিত্র মসজিদগুলোতে হাজার হাজার মুসল্লির জন্য ইফতার আয়োজন করা হয়। খেজুর, স্যুপ, সাম্বুসা ও আরবি কফি এখানে জনপ্রিয় ইফতার আইটেম।

✅ লেবানন : কামানের শব্দে ইফতার ঘোষণা
লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে রমজানে কামান দাগিয়ে ইফতার ও সাহরির সময় ঘোষণা করা হয়। এটি মূলত মিসরের ঐতিহ্য থেকে শুরু হয়ে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

✅ সংযুক্ত আরব আমিরাত : ‘হক আল লায়লা’ উৎসব
শাবান মাসের ১৫ তারিখে শিশুরা উজ্জ্বল পোশাক পরে প্রতিবেশীদের বাড়ি গিয়ে মিষ্টি ও বাদাম সংগ্রহ করে। এটি রমজানের আগমনের প্রতি আনন্দ প্রকাশের উৎসব।

🔹 দক্ষিণ এশিয়ার রমজান সংস্কৃতি
✅ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান : বাহারি ইফতার আয়োজন
এই অঞ্চলে পিঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, জিলাপি, শরবত, খেজুর ও হালিম অন্যতম জনপ্রিয় ইফতার আইটেম। রাস্তাঘাট, মসজিদ ও বাসাবাড়িতে ইফতার বিতরণ এখানকার এক বিশেষ ঐতিহ্য।

✅ পাকিস্তান : সাহরি ডাক
পেশাওয়ার ও কাশ্মীর অঞ্চলে ‘সাহরি ডাক’ নামে একটি প্রথা রয়েছে, যেখানে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত লোকেরা ড্রাম বাজিয়ে সাহরির জন্য মানুষকে জাগিয়ে তোলে

🔹 দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রমজান ঐতিহ্য
✅ ইন্দোনেশিয়া : ‘পাডুসান’ (Padusan) প্রথা
জাভা দ্বীপে রমজানের আগে ঝরনা বা নদীতে গোসল করা হয়, যা শারীরিক ও আত্মিক বিশুদ্ধতার প্রতীক।

✅ মালয়েশিয়া : ‘পাসার রমাদান’ বাজার
রমজান মাসে মালয়েশিয়ায় ‘পাসার রমাদান’ নামে বিশেষ বাজার বসে, যেখানে ইফতার সামগ্রী বিক্রি হয়। এটি শুধু কেনাকাটার জায়গা নয়, বরং একটি সামাজিক মিলনমেলা

🔹 আফ্রিকার রমজান ঐতিহ্য
✅ সেনেগাল : ‘নডগু’ (Ndogou) ইফতার
সেনেগালে সবাই একত্র হয়ে খেজুর, ফলমূল ও দুগ্ধজাত খাবার খেয়ে ইফতার করে, যা সামাজিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।

✅ মরক্কো : ‘নাফার’ দ্বারা সাহরির সময় ঘোষণা
মরক্কোতে ‘নাফার’ নামের লোকেরা শিঙা বাজিয়ে সাহরির সময় মুসলিমদের জাগিয়ে তোলে, যা ঐতিহ্যবাহী প্রথা হিসেবে জনপ্রিয়।

🔹 ইউরোপ ও আমেরিকার রমজান সংস্কৃতি
✅ তুরস্ক : ঐতিহ্যবাহী ড্রাম বাজিয়ে সাহরি ঘোষণা
তুরস্কে রমজানের সময় বিশেষ পোশাক পরিহিত ড্রামাররা সাহরির সময়সূচি ঘোষণা করে। এছাড়া, ইস্তাম্বুলসহ বিভিন্ন জায়গায় কামান দাগিয়ে ইফতার ঘোষণা করা হয়।

✅ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র : বহুজাতিক ইফতার আয়োজন
পশ্চিমা দেশগুলোর মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারে বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী ইফতার আয়োজন করেন। এটি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে একত্র করে এবং মুসলিম ঐক্যকে শক্তিশালী করে।

🔹 বিশ্বব্যাপী রমজানের ঐক্য ও বৈচিত্র্য
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রমজান ভিন্ন রীতিতে পালিত হলেও এর মূল উদ্দেশ্য আত্মশুদ্ধি, সহানুভূতি ও মানবতার কল্যাণ। এই পবিত্র মাস মুসলিমদের মধ্যে সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধকে আরও দৃঢ় করে তোলে।

(তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, আল-আরাবিয়া, আল-কুদস আল-আরাবি ইত্যাদি)

CATEGORIES
Share This

COMMENTS Wordpress (0) Disqus ( )