দূষিত তথ্যে কলুষিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত বেকারত্বের তথ্য নিয়ে চলছে বিতর্ক। সংস্থাটি দাবি করছে, দেশে বেকার সংখ্যা মাত্র ২৬ লাখ ৭০ হাজার, যা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করছেন অর্থনীতিবিদরা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশে বেকারের সংখ্যা কয়েক কোটি, যা বিবিএসের প্রতিবেদনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বিবিএসের সর্বশেষ জরিপে বেকারদের সংখ্যা কম দেখানো হলেও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুযায়ী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬ শতাংশ স্নাতকই বেকার। লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যমতে, ১০০ জন স্নাতকের মধ্যে ৪৭ জনই চাকরিহীন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ২০১৮ সালে বেকার সংখ্যা তিন কোটি বলে উল্লেখ করেছিল, যা কয়েক বছরের মধ্যে দ্বিগুণ হওয়ার আভাসও দেওয়া হয়েছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বেকারত্ব নির্ধারণে বিবিএস যে সংজ্ঞা ব্যবহার করছে, তা দেশের প্রকৃত কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি প্রতিফলিত করে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহম্মদ মইনুল ইসলাম জানান, বিবিএসের বেকারত্বের পরিমাপ পদ্ধতি সঠিক নয় এবং এ বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন।
বিবিএসের তথ্য নিয়ে শুধুমাত্র বেকারত্ব নয়, মূল্যস্ফীতি নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। ২০২২ সালের একটি জরিপে দেশের দারিদ্র্য কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হলেও বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা, যেমন সানেম, বলছে, দারিদ্র্য প্রকটভাবে বেড়েছে। এছাড়া, বিবিএসের তথ্য ব্যবহারকারী ৬৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের ডেটার সঠিকতা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য দেশের অর্থনৈতিক নীতিমালা এবং উন্নয়ন পরিকল্পনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বর্তমানে একটি সমন্বিত ‘পরিসংখ্যাননীতি’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিচ্ছে, যাতে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায়।