দুনিয়া ও আখিরাতে সুখী হওয়ার মূলনীতি: সত্কর্ম ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস
দুনিয়া ও আখিরাতে সুখী হওয়ার মূলনীতি হলো সত্কর্ম করা। সত্কর্মশীল ব্যক্তিরাই উভয় জগতে সুখী জীবনের অধিকারী হন। তবে এ সুখ অর্জনের অন্যতম শর্ত হলো আখিরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা। ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে, পরকালে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে হিসাব দেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পুরুষ বা নারী, মুমিন অবস্থায় যে কেউ সত্কর্ম সম্পাদন করে, আমি তাকে উত্তম জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের চেয়ে উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করব।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৯৭)।
নিম্নে পৃথিবীতে সুখ লাভের জন্য আখিরাত বিশ্বাসের কিছু দিক এবং এর সুফল আলোচনা করা হলো—
১. ইসলামের বিধানাবলি স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করা:
দুনিয়া ও আখিরাতে সুখী হওয়ার অন্যতম উপায় হলো, ইসলামের বিধানাবলি সহজভাবে গ্রহণ করা এবং সেগুলোর ওপর আমল করা। মুমিনদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো যেকোনো ভুলের পর অনুশোচনা করা, নিজেকে শোধরানো এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের নেতাদেরও। যদি কোনো বিষয়ে তোমরা বিতর্কে জড়াও, তবে তা আল্লাহ ও রাসুলের কাছে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসী হও। এতে কল্যাণ ও পরিণতি সর্বোত্তম।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৫৯)।
আখিরাতে বিশ্বাসের কারণেই মানুষ দুনিয়ার স্বার্থ ত্যাগ করে এবং আল্লাহ ও রাসুলের ফায়সালা মেনে নেয়।
২. নেক কাজে একাগ্রতা তৈরি করা:
ভালো ও নেক কাজের প্রতি একাগ্রতা এবং ধারাবাহিকতা দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্যের প্রধান মাধ্যম। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আখিরাতের ফসল কামনা করে, আমরা তার ফসল বৃদ্ধি করি। আর যে দুনিয়ার ফসল কামনা করে, আমরা তাকে তা থেকে কিছু দিই। কিন্তু আখিরাতে তার কোনো অংশ থাকে না।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ২০)।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যার একমাত্র চিন্তা আখিরাত, আল্লাহ তার অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেন এবং তার সমস্যাগুলোকে সমাধান করে দেন। পক্ষান্তরে, যার একমাত্র চিন্তা দুনিয়া, আল্লাহ তার অভাবসমূহ সামনে এনে দেন এবং তার সমস্যাগুলোকে জটিল করে দেন। অথচ তার নিকট আসে না তার তাকদিরে নির্ধারিত অংশ ছাড়া।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৬৫)।
৩. আখিরাতের প্রতি আহ্বান করা:
নবীজি (সা.) সাহাবিদের আখিরাতের প্রতি আহ্বান করে দুনিয়ার ওপর আখিরাতকে প্রাধান্য দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। খন্দকের যুদ্ধের সময় প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত সাহাবিদের উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আসল আরাম আখিরাতের আরাম। হে আল্লাহ! তুমি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করো।’ (বুখারি, হাদিস: ৪০৯৮)।
এই আহ্বানটি দুনিয়াবি কষ্টের মধ্যে আখিরাতের আরামের গুরুত্ব তুলে ধরে। আখিরাতের প্রতি দৃষ্টি রেখে সত্কর্মে মনোনিবেশ করলে উভয় জগতেই কল্যাণ লাভ করা যায়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্কর্মশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সুখী জীবন লাভে সাহায্য করুন। আমিন।