দাদন প্রথার কারণে বাড়ছে আলুর দাম

দাদন প্রথার কারণে বাড়ছে আলুর দাম

রাজধানীর বাজারে আলুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় পৌঁছেছে। দুই মাস ধরে চলমান এই পরিস্থিতিতে ক্রেতারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা পাইকারি বাজারের মূল্যবৃদ্ধির কথা বললেও মূল সমস্যার শিকড় দাদন প্রথা এবং কোল্ডস্টোরেজভিত্তিক সিন্ডিকেটে নিহিত।

দাদন প্রথার প্রভাব:
কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা উৎপাদনের আগেই কৃষকদের কাছে দাদনের টাকা দিয়ে চুক্তিভিত্তিক কম দামে আলু কিনে নেন। ফলে কৃষকরা মাঠে আলু তোলার সঙ্গেই আগাম চুক্তি মোতাবেক বিক্রি করতে বাধ্য হন। এজেন্টদের মাধ্যমে কোল্ডস্টোরেজে পৌঁছানোর পর বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেয় সিন্ডিকেট।

মধ্যসত্ত্বভোগীদের আধিপত্য:
কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ গড়ে ১০.৫১ টাকা হলেও, মাঠে তা ২০-২১ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু রাজধানীর বাজারে একই আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে অন্তত সাত থেকে আটটি স্তর পেরিয়ে এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটে।

সবজির দামের সম্পর্ক:
বাজারে সবজির দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষ আলুর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সিন্ডিকেট আলুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ক্যাবের মন্তব্য:
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজির হোসেন জানান, কোল্ডস্টোরেজের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ এবং বাজার ব্যবস্থাপনার ত্রুটি এ পরিস্থিতি তৈরির মূল কারণ।

টিসিবি’র হস্তক্ষেপ:
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ৩০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি শুরু করেছে। তবে এটি পরিস্থিতি সামাল দিতে যথেষ্ট নয়।

সমাধানের প্রস্তাব:

দাদন প্রথা বাতিল: কৃষকদের দাদনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সরাসরি কোল্ডস্টোরেজ ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে।
কৃষি ঋণ: কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে কৃষি ঋণ ব্যবস্থা চালু করা দরকার।
বাজার ব্যবস্থাপনা: সরকারিভাবে আলুর মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং মধ্যসত্ত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে হবে।
উৎপাদন খরচ নির্ধারণ: বীজ, কীটনাশক, এবং বিক্রির সুষ্ঠু মূল্য নির্ধারণ নিশ্চিত করতে হবে।
এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে আলুর বাজার স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর চাপ কমবে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )