ড্রাম: ছন্দের যন্ত্র, সংস্কৃতির প্রতীক

ড্রাম: ছন্দের যন্ত্র, সংস্কৃতির প্রতীক

মানুষের সঙ্গে ছন্দের সম্পর্ক বহু পুরনো। প্রকৃতির শব্দে লুকিয়ে থাকা ছন্দ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং সেই অনুপ্রেরণা থেকেই জন্ম নিয়েছে ড্রাম—একটি ঐতিহ্যবাহী এবং সর্বকালের জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র। ড্রামের ইতিহাস হাজার বছরেরও পুরনো। এটি শুধু বিনোদনের জন্য নয়, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং সামরিক কার্যক্রমেও একসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ড্রামের উৎপত্তি
গবেষকদের মতে, ড্রামের উৎপত্তি আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রাচীন মিসরে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ সালে ড্রামের ব্যবহার শুরু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। চীনের সভ্যতায় কুমিরের চামড়া দিয়ে তৈরি ড্রামের নজির পাওয়া যায়। ভিয়েতনামের উত্তরের ব্রোঞ্জ যুগের ‘ডং সান’ সভ্যতার নিদর্শন হিসেবে ব্রোঞ্জের তৈরি ড্রাম এখনো বিদ্যমান। শ্রীলঙ্কার প্রাচীন ইতিহাস বলে, সেখানে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগেই ড্রামের ব্যবহার ছিল।

আদিম সময়ে ড্রাম তৈরি হতো মাটির পাত্র, কাঠের টুকরা বা প্রাণীর চামড়া দিয়ে। এটি ছিল মানুষের প্রথম বাদ্যযন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন।

ড্রামের বিবর্তন
মধ্যযুগে ইউরোপে ড্রামের ব্যবহার সামরিক কার্যক্রমে ব্যাপক ছিল। সৈন্যদের মনোবল বাড়ানো, মিছিলের তাল মেলানো বা শত্রুকে ভয় দেখানোর জন্য ড্রাম অপরিহার্য ছিল। এশিয়ার দেশগুলোতে, বিশেষ করে ভারত ও চীনে, ড্রাম ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত ছিল। উপজাতির মানুষ ড্রাম ব্যবহার করত তাদের দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের সংকেত দেওয়ার জন্যও ড্রামের ব্যবহার ছিল। চীনের ‘তাংগু’ ড্রাম এবং ভারতের ‘মৃদঙ্গ’ ও ‘তবলা’ হলো এই ঐতিহ্যের উজ্জ্বল উদাহরণ।

আধুনিক যুগে ড্রাম
বিশ শতকের শুরুতে ড্রাম সেটের আবির্ভাব ঘটে। এই সেট এককভাবে একজন ড্রামারকে বিভিন্ন ধরনের ছন্দ তৈরি করতে সাহায্য করে। জ্যাজ, ব্লুজ, রক, মেটাল থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের সংগীতেই ড্রাম এখন অপরিহার্য।

প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে ইলেকট্রনিক ড্রামের ব্যবহারও বাড়ছে। এটি নানা রকমের ডিজিটাল শব্দ তৈরির মাধ্যমে সংগীতে নতুন মাত্রা যোগ করে চলেছে। আধুনিক ড্রাম শুধু একটি বাদ্যযন্ত্র নয়, বরং সংগীতের ভাষায় একটি বিশেষ রূপ।

ড্রামের গুরুত্ব
ড্রাম হলো সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং মানবজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি না শুধু ছন্দ তৈরি করে, বরং মানুষের মনের গভীরে স্পর্শ করে। প্রাচীন কাল থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত ড্রামের বিবর্তন সময়ের সাথে সাথে চলমান এবং এটি সংগীতের জগতে চিরস্থায়ী স্থান দখল করে রেখেছে।

ড্রামের মাধ্যমে মানুষ নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে, সংস্কৃতিকে জীবন্ত রাখে এবং একে অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র হিসেবে সময়ের পরীক্ষায় টিকে আছে এবং ভবিষ্যতেও তার গুরুত্ব অক্ষুণ্ণ থাকবে। 🥁

CATEGORIES
Share This

COMMENTS Wordpress (0) Disqus (0 )