টেলিভিশনের কতৃত্ব রাজনীতিবিদদের হাতে চলে গেছে
একসময় বাংলাদেশে ছিল একমাত্র চ্যানেল বিটিভি, যেখানে প্রচারিত প্রতিটি অনুষ্ঠান দর্শকদের মনে স্থায়ী জায়গা করে নিতো। তবে বর্তমানে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর দর্শক সংখ্যা কমে গেছে, এবং বিদেশি চ্যানেল ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝোঁক বাড়ছে। বিশেষ করে, গ্রামীণ এলাকাগুলিতেও বিদেশি চ্যানেলগুলোকে গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে।
বিশ্ব টেলিভিশন দিবসে নির্মাতা দীপংকর দীপন মন্তব্য করেছেন যে, টেলিভিশনের দর্শক কমে যাওয়ার বিষয়টি সরলীকরণ করা উচিত নয়। তিনি বলেন, “কোনো অনুষ্ঠান বা কন্টেন্টে দর্শকের আগ্রহ কমে গেলে তা স্বাভাবিকভাবেই তাদের অনুষ্ঠান দেখা বন্ধ করে দেয়।”
বিশেষ করে সংবাদ বিভাগে দর্শকের আগ্রহ হারানোর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, যদি সংবাদ নিরপেক্ষ না হয় এবং সত্য প্রকাশ না করে, তবে দর্শককে ফিরে পাওয়া কঠিন। নাটক বা ফিকশনেও কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী টেলিভিশনে যে ধরনের হালকা গল্প প্রচারিত হয়, তার বিপরীতে বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গভীর বা জটিল গল্প প্রচারিত হয়, যা বিশেষ করে নারীদের কাছে অতিরিক্ত ভারী মনে হয়। তাই অনেক নারী দর্শক ভারতীয় চ্যানেলে চলে যান, যেখানে সেই ধরনের সিরিয়ালগুলো প্রচারিত হয়।
অন্যদিকে, টেলিভিশনে ১ ঘণ্টার নাটক, যা বাংলাদেশি দর্শকদের কাছে একসময় জনপ্রিয় ছিল, বর্তমানে বাজেটের অভাবে তার নির্মাণ কমে গেছে। তবে ইউটিউবের মাধ্যমে এক ঘণ্টার নাটক আবার নতুন করে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, যেখানে নির্মাতারা ভালো বাজেট পাচ্ছেন।
এছাড়া, দীপংকর দীপন নন-ফিকশন অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলেন, “বহির্বিশ্বে রিয়ালিটি শো এবং নন-ফিকশন অনুষ্ঠানের আয়োজন অনেক বড় এবং বৈচিত্র্যময় হয়, কিন্তু বাংলাদেশে এর জন্য পর্যাপ্ত বাজেট ও দৃষ্টিভঙ্গি নেই, ফলে দর্শক আগ্রহ হারাচ্ছে।”
একইসাথে, তিনি এক ধরনের রাজনৈতিক চাপের কথা উল্লেখ করেন, যার কারণে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মালিকানা রাজনীতিবিদদের হাতে চলে গেছে। তিনি বলেন, “রাজনীতিবিদরা তাদের পছন্দের দলকে সহায়তা করার জন্য চ্যানেলগুলোর মালিকানা হাতে নিয়ে নিয়েছে, ফলে অনুষ্ঠান বা চ্যানেলের উন্নতি নিয়ে কোনো ভাবনা নেই।” তার পরামর্শ, “টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মালিকানা মিডিয়া ব্যবসায়ীদের হাতে যেতে হবে, যারা মূলত মিডিয়া ও ব্যবসা দুটোই ভালোভাবে বুঝতে পারেন।”
এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন যে, চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান বিভাগ ও সংবাদ বিভাগকে স্বাধীনতা দেয়া উচিত যাতে তারা কোনো রাজনৈতিক চাপের ঊর্ধ্বে থেকে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে।