
জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলা আইসিসিতে পাঠানোর আহ্বান টবি ক্যাডম্যানের
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান কৌঁসুলির বিশেষ উপদেষ্টা টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে **২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মামলা নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন আলোচিত আন্তর্জাতিক অপরাধ মামলায় কাজ করা এই আইন বিশেষজ্ঞ বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ও আইসিসির সম্ভাব্য সহযোগিতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক আদালতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়।
আইসিসির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজের পরামর্শ
বৈঠকে টবি ক্যাডম্যান উল্লেখ করেন যে, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর ছত্রছায়ায় থাকা অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ছাড়া, পরিপূরক বিচারব্যবস্থার অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে আইসিসির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্ত
বৈঠকের শুরুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) চলমান কার্যক্রম ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষত, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত সহিংসতার বিচার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “জাতিসংঘের সাম্প্রতিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের জানা উচিত ১,৪০০ শিক্ষার্থী, বিক্ষোভকারী ও শ্রমিকদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল কে এবং মূল অপরাধীরা কারা। জাতিসংঘের তদন্ত দল শেখ হাসিনা সরকারের আসল চেহারা উন্মোচন করেছে। এখন আমাদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
আইসিটি’র কাঠামোগত সংস্কারের পরামর্শ
টবি ক্যাডম্যান আইসিটির আইনি কাঠামো ও কার্যপ্রণালী সংশোধনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করা দরকার, যাতে এটি আগের স্বৈরাচারী শাসনের ধারাবাহিকতা মনে না করা হয়।”
এছাড়া, মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত নীতিমালা ও প্রমাণ গ্রহণের পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার ওপর জোর দেওয়া হয়, যাতে ন্যায়বিচারের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত হয়।
সাক্ষীদের নিরাপত্তা ও লুটপাট হওয়া সম্পদ ফেরানোর উদ্যোগ
বৈঠকে সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, লুটপাট হওয়া সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও দেশে ফিরিয়ে আনার আইনি পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শেষে অধ্যাপক ইউনূস টবি ক্যাডম্যানকে উপহার হিসেবে ‘আর্ট অব ট্রায়াম্ফ: গ্রাফিতি অব বাংলাদেশস নিউ ডন’ বইটি দেন, যা বাংলাদেশের নতুন যুগের আশা ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।