
চিকিৎসকসহ জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত
চিকিৎসক সংকট, দেবীদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত—এই তিনটি শব্দই এখন কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার বাস্তব চিত্র। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকট চলায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতালে শয্যার চেয়ে দ্বিগুণ রোগী
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে আসে সহস্রাধিক রোগী। শয্যা সংখ্যা ৫০ হলেও ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায়ই ১০০ ছাড়িয়ে যায়। অনেক রোগীকে মেঝেতে ও করিডরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখতে হয়।
৬৬টি পদ খালি, চিকিৎসক নেই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ২২ চিকিৎসক ও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির ১৯৫ জন কর্মচারীর অনুমোদিত পদ থাকলেও বর্তমানে ১৩ জন চিকিৎসক ও ৫৩ জন কর্মচারীর পদ শূন্য। অর্থাৎ মোট ৬৬টি পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি।
এছাড়া ছয়টি চিকিৎসক পদ শূন্য এবং সাতজন প্রেষণে থাকায় কার্যত ১৩ জন চিকিৎসকই অনুপস্থিত। ফলে মাত্র চার-পাঁচজন চিকিৎসককে একসঙ্গে বহির্বিভাগ, ইনডোর ও জরুরি সেবা সামলাতে হয়।
জুনিয়র কনসালটেন্টের ১০টি পদের মধ্যে সাতটি শূন্য। মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, চর্মরোগ, অর্থোপেডিকস, ইএনটি ও চক্ষু বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় বিশেষায়িত চিকিৎসা কার্যত বন্ধ। অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় অপারেশন থিয়েটারের কাজও প্রায় অচল।
কর্মচারী সংকটে প্রশাসন ও পরিচ্ছন্নতা ব্যাহত
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকটও তীব্র। মিডওয়াইফ, ফার্মাসিস্ট, টেকনোলজিস্ট, স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী—সবখানেই শূন্যপদ। ফলে হাসপাতালে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা দুটোই বিঘ্নিত হচ্ছে।
দালালচক্রের দৌরাত্ম্য ও প্রাইভেট ক্লিনিকের প্রভাব
স্থানীয়রা জানান, সরকারি হাসপাতালের দুরবস্থার আরেক বড় কারণ দালালচক্র ও ওষুধ কোম্পানির প্রভাব। উপজেলা জুড়ে থাকা ৩৭টি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকের দালালরা সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে অখ্যাত ওষুধ কোম্পানির প্রেসক্রিপশন দিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করা হয়।
অন্যদিকে হাসপাতালের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটিও কার্যত বন্ধ, কারণ স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিক মালিকদের চাপ রয়েছে। ফলে দরিদ্র রোগীরা সময়মতো উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে পারছেন না।
কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মহিবুস সালাম খান বলেন,
“চিকিৎসক ও জনবল সংকটের বিষয়টি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জনবল পূরণ হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তবে প্রেষণে যাওয়া চিকিৎসকদের স্থলে নতুন নিয়োগ না পাওয়ায় রোগীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।”
সারসংক্ষেপ
দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ওষুধ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও যন্ত্রপাতির ঘাটতিতে ক্রমেই বাড়ছে রোগীদের দুর্ভোগ।
সূত্র: স্থানীয় প্রতিনিধি, দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

