
চাটমোহরে মহিলা দল নেতা গ্রেপ্তার, দুই নেত্রী রিমান্ডে
পাবনার রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে চাটমোহরে মহিলা দল নেতা গ্রেপ্তার হওয়া ঘটনাটি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করা এই ঘটনায় চাটমোহরে মহিলা দলের দুই নেত্রী—বুড়ি সরকার ও রহিমা রেজাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুরোনো মারধর ও হত্যাচেষ্টার মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই বৃহস্পতিবার ভোররাতে চাটমোহরে বুড়ি সরকার রহিমা রেজাকে পৃথক অভিযানে আটক করা হয়।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া দুজনই জাতীয়তাবাদী মহিলা দল চাটমোহর উপজেলা শাখার বিলুপ্ত কমিটির নেতা। বুড়ি সরকার (৪২) ছিলেন কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি; তিনি পৌর সদরের মধ্য শালিখা মহল্লার মৃত ডা. কোবাদ হোসেনের মেয়ে। অপরদিকে রহিমা রেজা (৪৫) ছিলেন একই বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক; পৌর সদরের বালুচর মহল্লার ভিপি সেলিম রেজার স্ত্রী তিনি। পরে মাদক কারবার ও সেবনের অভিযোগে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তাকে ওই পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, চাটমোহর উপজেলা মহিলা দলের (বিলুপ্ত) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তামান্না আজিজা স্বর্ণা গত ২৩ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে পৌরসদরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার আফ্রাতপাড়ায় বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নিতে যান। সেখানে পূর্ববর্তী রাজনৈতিক বিরোধের জেরে রহিমা রেজা ও বুড়ি সরকার দেশীয় অস্ত্র হাতে তার ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ করা হয়েছে। মারধরে স্বর্ণা গুরুতর আহত হলে তিনি চিকিৎসা নেন এবং পরে ছিনতাই ও হত্যাচেষ্টার ধারায় থানায় মামলা করেন।
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজুরুল আলম বলেন, আদালত থেকে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে বুধবার রাত থেকে অভিযান চালানো হয়। পৃথক অভিযানে পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে পলাতক দুই আসামি—বুড়ি সরকার ও রহিমা রেজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ বৃহস্পতিবার তাদের পাবনা আদালতে সোপর্দ করা হবে এবং আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া চলবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার হওয়া দুজনের বিরুদ্ধেই দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনের ভেতরে নানা অভিযোগ ছিল। বিশেষ করে রহিমা রেজার বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও ব্যবসার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ১ সেপ্টেম্বর উপজেলা মহিলা দলের বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। তবে গ্রেপ্তারের পর এ ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও মন্তব্য করছেন তাদের স্বজনেরা।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চাটমোহরে মহিলা দল নেতা গ্রেপ্তার ইস্যুতে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ভেতরের পুরনো বিভক্তি আবারও সামনে চলে এসেছে। মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া এগোলে ঘটনার প্রকৃত কারণ এবং মাঠপর্যায়ের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তারা।

