চট্টগ্রামে শিশু অপহরণ করে লাখ টাকায় বিক্রি, মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার ২

চট্টগ্রামে শিশু অপহরণ করে লাখ টাকায় বিক্রি, মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার ২

চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকায় এক বছর বয়সী শিশু রাব্বীকে অপহরণ করে এক লাখ টাকায় বিক্রির অভিযোগে অপহরণ চক্রের মূলহোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৭। অভিযানের মাধ্যমে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম এ তথ্য জানান। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. দুলাল মিয়া ও মোরশেদ মিয়া।

অপহরণের কৌশল
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ফাতেমা আক্তার নামের এক নারী তার পাঁচ বছর বয়সী কন্যা ও এক বছর তিন মাস বয়সী শিশুপুত্র রাব্বীকে নিয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে আসেন। সেখানে দুলাল মিয়ার সঙ্গে তার পরিচয় হয়।

ফাতেমা আক্তার নেত্রকোনাগামী ট্রেনের সময়সূচি জানতে চাইলে দুলাল মিয়া ভুল তথ্য দিয়ে বলেন, সেদিন কোনো ট্রেন নেই। পরে ফাতেমা তাকে বোয়ালখালীতে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু দুলাল চক্রান্ত করে তাদের বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে বাকলিয়া থানার বাসুর কলোনির একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়।

১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে ফাতেমা বাথরুমে গেলে দুলাল তার এক বছরের সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ফাতেমার স্বামী বাকলিয়া থানায় দুলালকে আসামি করে মামলা করেন।

র‍্যাবের অভিযান ও শিশুর উদ্ধার
মামলার পর র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুলাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে দুলাল জানায়, সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার এক প্রবাসী দম্পতির কাছে শিশুটিকে এক লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয় এবং শিশু ক্রয়ের অভিযোগে মোরশেদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অপহরণ চক্রের রহস্য
র‍্যাব জানায়, দুলাল মিয়া আগেও শিশু অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিল। সিডিএমএস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তিনি আড়াই বছর বয়সী সারা মনিকে অপহরণের মামলায় প্রধান আসামি।

তার স্ত্রী রুনা বেগমও অপহরণ চক্রের সদস্য এবং বর্তমানে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানার মামলায় কারাগারে রয়েছেন। দুলাল মিয়ার মোবাইল বিশ্লেষণে শিশু বিক্রির বিষয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথনের তথ্য পাওয়া গেছে।

শিশু কেনার উদ্দেশ্য
গ্রেপ্তারকৃত মোরশেদ মিয়া ১৭ বছর প্রবাসে ছিলেন এবং ৫টি কন্যাসন্তানের জনক। তিনি পুত্রসন্তান চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে এই অপহরণ চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং শিশুটিকে ক্রয় করেন।

র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব আলম জানান, “এটি একটি সক্রিয় শিশু অপহরণ চক্র, যারা দীর্ঘদিন ধরে শিশু অপহরণ ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে র‍্যাব সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”

এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চক্রের বাকি সদস্যদের ধরতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS Wordpress (0) Disqus ( )