
ঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি ঘিরে বিক্ষোভ-সংঘর্ষ, নাগপুরে কারফিউ জারি
ভারতের মহারাষ্ট্রে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরিয়ে নেওয়ার দাবিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এর জেরে নাগপুরের বেশ কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।
১৭ শতকের সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি বর্তমানে ছত্রপতি সম্ভাজিনগর নামে পরিচিত এলাকায় অবস্থিত। বজরং দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সমাধি অপসারণের দাবিতে গতকাল সোমবার থেকে বিক্ষোভ শুরু করে, যা পরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় রূপ নেয়।
সহিংসতা ও পুলিশের পদক্ষেপ
নাগপুর পুলিশের কমিশনার রবীন্দ্র কুমার সিঙ্গাল ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৬৩ ধারার অধীনে কারফিউ জারি করেছেন। কারফিউ কোতোয়ালি, গণেশপেঠ, তহসিল, লাকাদগঞ্জ, পাচপাওলি, শান্তিনগর, সক্করদারা, নন্দনবন, ইমামওয়াদা, যশোধরানগর ও কপিলনগর থানার আওতাভুক্ত এলাকায় প্রযোজ্য এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
ধর্মগ্রন্থ পোড়ানোর গুজবে পরিস্থিতি জটিল
বিক্ষোভ চলাকালে বজরং দল কর্মীরা শিবাজি মহারাজের মূর্তির কাছে জড়ো হয়ে আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিতে স্লোগান দেয় এবং সবুজ কাপড়ে মোড়ানো একটি প্রতীকী সমাধি পুড়িয়ে ফেলে।
এরপর সবুজ কাপড় পোড়ানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে তাতে ধর্মীয় শ্লোক লেখা ছিল, যা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
সংঘর্ষে আহত ও গ্রেফতার
সহিংসতায় প্রায় ৮০-১০০ জন মানুষ জড়িত ছিল বলে জানা গেছে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে এবং কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
সংঘর্ষে চারজন সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন
এক ডজনের বেশি পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন
সহিংসতার অভিযোগে ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে
নেতাদের প্রতিক্রিয়া
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও নাগপুরের সংসদ সদস্য নীতিন গড়করি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন,
“যারা সহিংসতায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে ইতোমধ্যেই বিষয়টি জানানো হয়েছে, তাই গুজবে কান দেবেন না।”
মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ নাগরিকদের আইন নিজের হাতে না নেওয়ার অনুরোধ করেছেন এবং পুলিশকে সহায়তা করতে বলেছেন।
বিরোধীদের সমালোচনা
এই সহিংসতা নিয়ে বিরোধীরা রাজ্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছে।
শিবসেনা ইউবিটি বিধায়ক আদিত্য ঠাকরে এক্স (টুইটারে) লিখেছেন,
“রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা আগের চেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। নাগপুর শহরও নিরাপদ নয়।”
কংগ্রেস নেতা পবন খেরা বলেন,
“নাগপুর তার ৩০০ বছরের ইতিহাসে কখনো দাঙ্গার সম্মুখীন হয়নি। এখন শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক স্বার্থে ইতিহাসকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।”
পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি