
কসবা সীমান্তে যুবককে গুলি করে হত্যা, মরদেহ ফেরত পাঠাল বিএসএফ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর গুলিতে নিহত হয়েছেন মো. আল-আমিন (৩২)। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পুটিয়া সীমান্তে বিএসএফের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
শনিবার বিকেলে বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তার মরদেহ ফেরত দেওয়া হয়। নিহত আল-আমিন পুটিয়া গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে।
ঘটনার বিবরণ
পরিবারের সদস্যদের ভাষ্যমতে, বাড়ির একটি গরু সীমান্তের ওপারে চলে গেলে আল-আমিন সেটি আনতে যান। এসময় বিএসএফ তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। কিছুক্ষণ পর পরিবারের সদস্যরা তার মৃত্যুর খবর পান।
বিজিবির ৬০ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জিয়াউর রহমান বলেন,
“বিএসএফ রাতে জানিয়েছিল আল-আমিন আহত হয়েছেন, তবে সকালে তারা তার মৃত্যুর খবর দেয়। পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মরদেহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং ঘটনার জন্য বিএসএফ অনুতপ্ত হয়েছে।”
বিজিবির প্রতিবাদ ও কঠোর অবস্থান
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন,
“হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সীমান্ত আইন লঙ্ঘনকারী কাউকে আমরা নিয়ম অনুযায়ী হস্তান্তর করি। কিন্তু বিএসএফ নিয়ম না মানলে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে।”
পরিবারের আহাজারি ও বিচার দাবি
নিহতের স্ত্রী তারিনা আক্তার, যিনি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা, বলেন,
“বিএসএফ আমার স্বামীকে বিনা কারণে হত্যা করেছে। আমার স্বামী তার সন্তানের মুখ দেখতে পারল না। আমি এর বিচার চাই।”
নিহতের চাচা মো. আলী আহমেদ জানান,
“আল-আমিন আহত হওয়ার পর বিএসএফ তাকে নিয়ে যায় এবং পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। আমরা দ্রুত মরদেহ ফেরতের দাবি জানিয়েছিলাম, যা বিজিবির মাধ্যমে কার্যকর হয়েছে।”
পতাকা বৈঠক ও মরদেহ হস্তান্তর
শনিবার বিকেল ৫টায় ২০৫০ পিলার এলাকায় বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিজিবির ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জিয়াউর রহমান এবং বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ৪৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অজিত কুমার। আলোচনার পর বিএসএফ আল-আমিনের মরদেহ হস্তান্তর করে।
প্রশাসনের বক্তব্য
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সামিউল ইসলাম বলেন,
“আল-আমিন সীমান্তের কাছে ঘোরাঘুরি করার সময় সন্দেহভাজন হিসেবে বিএসএফ তাকে গুলি করে। এরপর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও তিনি মারা যান।”
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
কসবা বায়েক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন বলেন,
“বিএসএফের ছোড়া গুলিতেই আল-আমিন মারা গেছেন। পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।”
এ ঘটনায় সীমান্তে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।