
ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র ‘বিউগল’: ইতিহাস, ব্যবহার ও বাজানোর কৌশল
তোমরা কি কখনো এমন একটি বাদ্যযন্ত্র দেখেছ, যা বাজালে অনেক দূর থেকেও শোনা যায়? এটি দেখতে ট্রাম্পেটের মতো হলেও এতে কোনো পিস্টন বা বোতাম নেই। বাজানোর জন্য শুধুমাত্র ঠোঁটের চাপ ও ফুঁ দেওয়ার কৌশল ব্যবহার করতে হয়। এই বিশেষ বাদ্যযন্ত্রের নাম বিউগল।
বিউগল একটি ধাতব বাদ্যযন্ত্র, যার সামনের অংশ সরু এবং ধীরে ধীরে প্রশস্ত হয়ে ঘণ্টার মতো আকার ধারণ করে। বেশির ভাগ বিউগলে একটি একক বা দ্বিগুণ বাঁক থাকে, যা এটিকে সহজে বহনযোগ্য ও বাজানোর জন্য উপযোগী করে।
প্রাচীনকালে পশুর শিং দিয়ে তৈরি করা হতো বিউগল। পরবর্তীতে কাঠের বিউগলও দেখা যায়। তবে ব্রোঞ্জ যুগের পর থেকে ধাতব বিউগলের প্রচলন শুরু হয়। বর্তমানে এটি সাধারণত পিতল বা তামা দিয়ে তৈরি হয়, যা দেখতে চকচকে ও টেকসই।
প্রাচীনকালে শিকার ও যুদ্ধের সময় সংকেত দেওয়ার জন্য বিউগল ব্যবহৃত হতো। নেপোলিয়নের সময় সেনাবাহিনীতে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তীতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীতে বিউগল ব্যবহার শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে বিউগল সামরিক বাহিনীতে বিভিন্ন সংকেত দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন—সেনাদের ঘুম থেকে জাগানো, খাওয়ার সময় নির্ধারণ ও দিনের শেষ সংকেত দেওয়া। এছাড়া স্কাউট ও ক্যাডেট ক্যাম্প, শহীদদের স্মরণসভা এবং আনুষ্ঠানিক সংগীত পরিবেশনায় বিউগলের ব্যবহার দেখা যায়। শহীদদের স্মরণে বিউগলের সবচেয়ে পরিচিত সুর হলো ‘ট্যাপস’।
বিউগল বাজানো সহজ মনে হলেও এটি শিখতে ঠোঁটের শক্তি, নিঃশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক ফুঁ দেওয়ার কৌশল জানতে হয়। বাজানোর জন্য ডান বা বাঁ হাতে বিউগল ধরে মুখের অংশ ঠোঁটে রাখতে হয়। সোজা হয়ে দাঁড়ানো বা বসে সঠিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে ফুঁ দিতে হয়। যেহেতু এতে কোনো বোতাম বা কি নেই, তাই শুধুমাত্র ফুঁ দিয়েই সুরের ওঠানামা করাতে হয়। ছোট ছোট ফুঁ দিয়ে কম স্বরে বাজানো শুরু করলে এবং নিয়মিত অনুশীলন করলে বিউগল বাজানো শেখা সম্ভব।
সময় বদলালেও বিউগলের ঐতিহ্য আজও টিকে আছে। এটি শুধু সামরিক বাহিনীর সংকেত দেওয়ার যন্ত্রই নয়, বরং আনুষ্ঠানিক সংগীত পরিবেশনায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।