
ঈদের ভরা মৌসুমেও কর্মহীন পাবনার স্বর্ণকাররা, আকাশছোঁয়া দামে নেই অর্ডার
ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রমজান মাস সাধারণত পাবনার বেড়া উপজেলার স্বর্ণকারদের জন্য সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। এই মৌসুমে স্বর্ণালংকার তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটে তাঁদের, আয়ও হয় তুলনামূলক বেশি। তবে এবার ছবিটা ভিন্ন। ঈদের মাত্র ক’দিন আগে তারা রয়েছেন কার্যত বেকার। নেই স্বর্ণালংকার তৈরির অর্ডার, নেই ব্যবসার গতিও। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বেড়ার শতাধিক স্বর্ণকার পরিবার।
স্থানীয় স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ীরা জানালেন, স্বর্ণের দামে চলতি বছর নতুন রেকর্ড হয়েছে। বেড়ায় বর্তমানে প্রতি ভরি পাকা স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায়—যা সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে। গত ছয়-সাত মাস আগেও এই দাম ছিল এক লাখ টাকার নিচে।
বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে কেন্দ্র করে যেখানে দোকানগুলোতে ব্যস্ততা থাকার কথা, সেখানে এখন চরম নিস্তব্ধতা। বেশিরভাগ দোকানে নেই কোনো কাজ, অনেক কারিগর অলস বসে আছেন। কেউ কেউ দোকান ছেড়ে দিয়েছেন ভাড়ার খরচ সামলাতে না পেরে।
বেড়া বাজারের স্বর্ণকার বিশ্বজিৎ কুমার বলেন, “আগে ঈদের সময় দোকানেই থাকতে হতো, কাজের চাপ সামলানো যেত না। এখন দিনে আধাঘণ্টাও কাজ নেই। তাই দোকান ভাড়া চালাতে না পেরে ছেড়ে দিয়েছি।”
এ উপজেলার প্রায় ২০০টি স্বর্ণালংকার তৈরির দোকানে ১ হাজারেরও বেশি কারিগর কাজ করতেন। তারা জানান, স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ীদের অর্ডার না থাকায় দিনভর বসেই কাটছে। আগে দৈনিক ৬-৭ শত টাকা আয় হতো, এখন আয় প্রায় শূন্য।
এ অবস্থার জন্য শুধু স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন না তাঁরা। কৃষি আয়ের ওপর নির্ভরশীল এই অঞ্চলের অনেকেই এবার পেঁয়াজসহ নানা ফসলে লোকসানের মুখে পড়েছেন। ফলে ঈদকে কেন্দ্র করে গয়না তৈরিতে আগ্রহ কমেছে। এমনকি বিয়ের সময়ও স্বর্ণালংকারের ব্যবহার অনেকটা কমে গেছে।
বেড়া উপজেলার স্বর্ণকার রিপন কর্মকার বলেন, “আমরা অনেকেই এখন ঠিকমতো বাজারও করতে পারি না। স্বর্ণের কাজ নেই বললেই চলে। ঈদের মতো সময়েও বসে থাকছি।”
বেড়া উপজেলা স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গৌর কর্মকার বলেন, “স্বর্ণকারদের এমন দুঃসময় আমরা আর দেখিনি। ঈদের মৌসুমে যেখানে বেশি কাজ পাওয়ার আশা ছিল, সেখানে এখন অনেক দোকানই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই সংকট কাটাতে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।”