ইসলামে যেসব ব্যক্তির প্রশংসা নিষিদ্ধ

ইসলামে যেসব ব্যক্তির প্রশংসা নিষিদ্ধ

ইসলামে শরিয়তের মূলনীতির আলোকে সীমার মধ্যে থেকে প্রশংসা করা বৈধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ একাধিক নবীর প্রশংসা করেছেন, যেমন— ইরশাদ হয়েছে:
“যখন জাকারিয়া কক্ষে নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন ফেরেশতারা তাকে সম্বোধন করে বলল, আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন। সে হবে আল্লাহর বাণীর সমর্থক, নেতা, স্ত্রী-বিরাগী এবং পুণ্যবানদের মধ্যে একজন নবী।”
(সুরা: আলে ইমরান, আয়াত: ৩৯)

তবে প্রশংসা সীমালঙ্ঘন করলে তা ইসলাম অনুমোদন করে না। মহানবী (সা.) বলেছেন:
“তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন ঈসা ইবনে মারইয়ামের ব্যাপারে খ্রিস্টানরা বাড়াবাড়ি করেছিল। আমি আল্লাহর বান্দা। তাই বলো—আল্লাহর বান্দা ও তার রাসুল।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৪৪৫)

যেসব প্রশংসা নিষিদ্ধ
ইসলামে সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে কিছু ক্ষেত্রে প্রশংসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এগুলো হলো:

আত্মপ্রশংসা:
আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
“অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা কোরো না, তিনিই জানেন কে আল্লাহভীরু।”
(সুরা: নাজম, আয়াত: ৩২)

অতিপ্রশংসা:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“আল্লাহর শপথ! আল্লাহ আমাকে যে মর্যাদা দান করেছেন, তার চেয়ে উঁচু মর্যাদা আমাকে দান করো, সেটা আমি পছন্দ করি না।”
(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১২১৪১)

পাপিষ্ঠ ব্যক্তির প্রশংসা:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“তোমরা মুনাফিককে ‘আমাদের নেতা’ বলে সম্বোধন কোরো না। কেননা সে যদি নেতা হয়, তাহলে তোমরা তোমাদের মহামহিম আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করলে।”
(সুনানে আবি দাউদ, হাদিস: ৪৯৭৭)

সামনে প্রশংসা করা:
নবী (সা.) বলেন:
“তোমরা তাকে ধ্বংস করে দিলে বা তার মেরুদণ্ড ভেঙে ফেললে।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৬৬৩)

তোষামোদ ও চাটুকারিতা:
মহানবী (সা.) বলেছেন:
“তোমরা পরস্পরের অতিপ্রশংসা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা হত্যাতুল্য।”
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৭৪৩)

প্রশংসাপ্রত্যাশীদের প্রশংসা:
আল্লাহ বলেন:
“যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং যা নিজেরা করেনি এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে ভালোবাসে, তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে—এমন তুমি কখনো মনে কোরো না। তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।”
(সুরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৮)

প্রশংসা কখন বৈধ
ইসলামে সদুদ্দেশ্যে সীমার মধ্যে থেকে একজন মুমিন অপর মুমিনের প্রশংসা করতে পারে। বৈধ প্রশংসার উদ্দেশ্যগুলো হলো:

কৃতজ্ঞতা আদায় করা:
মহানবী (সা.) বলেছেন:
“যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে (যথাযথভাবে) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে না।”
(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২১৩৩১)

ভালো কাজে উৎসাহিত করা:
নবী (সা.) বলেছেন:
“আবদুল্লাহ কতই না উত্তম ব্যক্তি, যদি সে তাহাজ্জুদ আদায় করত।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৫৬)

ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা:
মুসা (আ.)-এর বিষয়ে শোয়াইব (আ.)-এর কন্যা বলেন:
“হে পিতা! আপনি একে মজুর নিযুক্ত করুন। কেননা আপনার মজুর হিসেবে উত্তম হবে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।”
(সুরা: কাসাস, আয়াত: ২৬)

আল্লাহ আমাদের সবাইকে শরিয়তের আলোকে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দিন। আমিন।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
Disqus (0 )