ইটের বিকল্প বালু-সিমেন্টের পরিবেশবান্ধব ব্লক
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই) পরিবেশবান্ধব বালু-সিমেন্ট ব্লক উৎপাদনের একটি উদ্ভাবনী প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল ঐতিহ্যবাহী ইট উৎপাদনের নেতিবাচক পরিবেশগত প্রভাব কমানো এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত বালু ব্যবহার করে সাশ্রয়ী মূল্যের ব্লক তৈরি করা।
ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী থেকে উত্তোলিত বালু ব্যবহার করে ‘প্রোডাকশন অব ইকো-ফ্রেন্ডলি ইকোনমিক্যাল ব্লকস অ্যাপ্লায়িং মিক্সচার অ্যান্ড ইটস অ্যাফোর্ডেবল ডিস্ট্রিবিউশন টু এন্ড ইউজারস’ প্রকল্পের অধীনে ফাঁপা বালি-সিমেন্ট ব্লক তৈরি করা হচ্ছে। এই ব্লকগুলোর দাম ঐতিহ্যবাহী ইটের তুলনায় অনেক কম এবং পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর নয়।
এইচবিআরআই-এর সিনিয়র রিসার্চ অফিসার ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ৫০০ সিএফটি বালুর মূল্য ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা, যা সিলেটি বালুর ৫০ হাজার টাকার তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। এই ব্লক ব্যবহারে নির্মাণ খরচের তিন ভাগের এক ভাগ কমে যাবে।
প্রকল্পের লক্ষ্য কৃষি জমির উপরের স্তরের মাটির ব্যবহার এবং কয়লার ওপর নির্ভরতা কমানো। জুলাই ২০২১ থেকে জুন ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ড্রেজ করা বালু দিয়ে তৈরি ব্লকগুলোর চাপ নেওয়ার ক্ষমতা ইটের চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশে বর্তমানে ২০০টিরও বেশি কারখানা ফাঁপা ব্লক উৎপাদন করছে। তবে সরকারি সহায়তা কম থাকার কারণে এই শিল্পের উন্নয়ন ধীরগতিতে চলছে। সরকারের লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে ইট উৎপাদন বন্ধ করা, কিন্তু এখনও ৬০-৭০% সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত নির্মাণ প্রকল্প ঐতিহ্যবাহী ইট ব্যবহার করে।
বর্তমানে বাংলাদেশের ইট শিল্প কৃষি জমির উর্বর মাটির ওপর নির্ভরশীল, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ১৩০ মিলিয়ন টন মাটি সংগ্রহ করা হয়। এর ফলে কৃষি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ছে এবং পরিবেশের ওপর চাপ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বালু-সিমেন্ট ব্লক ব্যবহারের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেছেন, ড্রেজিং সাইটের নিকট ব্লক উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য উপকারী হতে পারে।
সরকারের যথাযথ প্রণোদনা ও জনসচেতনতায় এই ব্লকগুলো প্রধান বিকল্প হতে পারে, যা নির্মাণ খাতে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। পরিবেশবান্ধব ব্লক তৈরির জন্য ড্রেজ করা বালুর অবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার জলপথ ড্রেজিং করার পরিকল্পনা করেছে।