
আ. লীগের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের নিয়ে সরকারি কর্মসূচি পালন
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তাদের ঘনিষ্ঠ চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা অংশগ্রহণ করছেন। এতে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৫ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন—
৩ নম্বর দেউলবাড়ী দোবরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আ. লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এফ এম রফিকুল আলম বাবুল
২ নম্বর মালিখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন দাড়িয়া বাবলু
১ নম্বর মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম বিলু
শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মনোজ কান্তি মণ্ডল
নাজিরপুর সদর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. আলমগীর হোসেন
এরা সবাই সাবেক মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম ও সাবেক এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব একেএম আউয়ালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন এবং এখনও তারা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার হচ্ছে না কেউ
গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর দলীয় দুর্বৃত্তরা গা ঢাকা দিলেও ধীরে ধীরে তারা আবার প্রকাশ্যে আসছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নাজিরপুরে একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটলেও প্রশাসন অপরাধীদের ধরতে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এসব অভিযোগ উত্থাপন করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে অনেকেই মনে করছেন, উপজেলা প্রশাসনের ভেতরেই আওয়ামীপন্থী প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছেন।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
নাজিরপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু হাসান খান বলেন, “প্রশাসনের মধ্যে এখনও আওয়ামী লীগের দোসররা রয়ে গেছে। তারা সঠিকভাবে কাজ করছে না, ডেভিল হান্টেও গ্রেপ্তার করছে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বিএনপি কখনো আওয়ামী দোসরদের আশ্রয় দেয়নি, ভবিষ্যতেও দেবে না।”
উপজেলা জামায়াতের আমির আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “নাজিরপুর প্রশাসন এখনও ৫ আগস্টের আগের প্রাচীন ধারা বজায় রেখেছে। তারা আওয়ামী লীগের মানসিকতা ধারণ করছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসন ঢেলে সাজানো হলেও নাজিরপুরে এখনও পুরনো সেটআপ বহাল রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্র-জনতাকে তারা কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রাখে না।”
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
নাজিরপুর থানার ওসি মো. মাহামুদ আল ফরিদ ভূঁইয়া বলেন, “আমরা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরূপ রতন সিংহের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন কেটে দেন এবং ক্ষুদেবার্তারও উত্তর দেননি।
পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান বলেন, “বিষয়টি প্রথমবার শুনলাম। ইউএনওর কাছ থেকে জানার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকার বদল হলেও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হয়নি। আওয়ামীপন্থী ব্যক্তিরা এখনও সরকারি কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকায় সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন— আসলে পরিবর্তন কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে?